কোভিড-১৯ সমাধান
গবেষণায় পিছিয়ে ঢাবি
দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা গবেষণাহীনতার সংস্কৃতি দায়ী * অপ্রতুল বাজেট, সমন্বয়হীনতা ও শিক্ষক রাজনীতি
মাহাদী হাসান
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গবেষণার মান ও পরিমাণ নিয়ে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এবার কোভিড-১৯ মহামারীর সংকট সমাধানে উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণাও করতে পারেনি ঢাবি। আর যে গবেষণা রয়েছে তাকে অপ্রতুল মনে করছেন অনেকে। নতুন গবেষণা করতে না পারার পেছনে দীর্ঘদিনের গবেষণাহীতার সংস্কৃতি, অপ্রতুল গবেষণা বরাদ্দ এবং শিক্ষকদের রাজনৈতিক দলাদলিকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যে কোনো দুর্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। তবে দেশে চলমান মাহামারী নিয়ে রাষ্ট্রের বর্তমান করণীয় কিংবা করোনা পরবর্তী সময়ে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের অর্থনৈতিক, সমাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষায় করণীয় বিষয় নির্ধাণের জন্য কোনো ধরনের ভূমিকা রাখতে পারছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা না করাকেই দায়ী করা হচ্ছে। তবে শিক্ষকদের অভিযোগ, গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের স্বল্পতা, গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ না থাকা, রাজনৈতিক দলাদলি, সমন্বয়হীনতা ও উপযুক্ত পরিতোষকের অভাবে দেশের এ সংকটময় মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না।
এদিকে করোনা পরীক্ষার চারটি রিয়ালটাইম পিসিআর যন্ত্রসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরীক্ষাগার রয়েছে তাতে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ নমুনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা থাকলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নমুনা না দেয়ায় করোনা শনাক্তের কাজ শুরু করতে পারছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একজন শিক্ষক যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকের সংখ্যা অনেক কম। কারণ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। গবেষণার বরাদ্দ অপ্রতুল, যা বরাদ্দ আসে সরকার থেকে তা বেতন-ভাতা কিংবা অন্যক্ষেত্রে চলে যায় ফলে এখানে শিক্ষকরা ইনবিল্ট যে রিসার্চ করবে সে সুযোগ নেই।
আরও বলেন, এখন বিশ্বে দুইভাবে গবেষণা করা হয়ে থাকে। এক, শিক্ষকরা শিক্ষকদের সঙ্গে মিলে এবং দুই, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালেয়ে এক শিক্ষকের সঙ্গে অন্য শিক্ষকের ইন্টিমেসি কম। ফলে শিক্ষকরা সমন্বিতভাবে গবেষণা করতে পারছেন না। এখানে লাল, নীল, গোলাপি রাজনৈতিক দলাদলি। দেশ লকডাউন হওয়ার কারণে শিক্ষকরা একজন অন্যজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারাও অন্যতম কারণ। আর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলেও গবেষণা করতে পারছেন না। তিনি বলেন, অনলাইনে গবেষণার নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অনেকে অনলাইনে গবেষণা করার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে ডাটা কালেকশন করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ যারা করোনাভাইরাসের প্রকৃত ভুক্তভোগী বিশেষ করে বস্তিতে থাকে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিকশাচালক, হকার কিংবা পথশিশুদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।
সবচেয়ে বড় সমস্যা গবেষণায় বরদ্দের অপ্রতুলতা। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে গবেষণায় যে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, তা দিয়ে গবেষণা করা সম্ভব নয়। জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা গবেষণায় বরাদ্দ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এতে গবেষণায় বরাদ্দ ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ২.১ শতাংশ। এ অর্থবছরের বাজেটে গত বছরের চেয়ে ৯.৩৫ শতাংশ বরাদ্দ বাড়লেও গবেষণায় বরাদ্দ কমেছে ২.৮৪ শতাংশ। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষকদের গবেষণার ওপর।
করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণার বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, কোনো নতুন রোগের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য যে ধরনের সক্ষমতা দরকার সে ধরনের সক্ষমতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা সমগ্র বাংলাদেশেরই নেই। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, আসলে এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একত্রিত হতে পারছেন না ফলে নতুন গবেষণা ব্যাহত হচ্ছে। আর যারা গবেষণা করতে চাচ্ছেন তারা যথেষ্ট বরাদ্দ পাচ্ছেন না এবং লকডাউনের কারণে ডাটা কালেকশন করতে পারছেন না।
ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, কোভিড নিয়ে বিশেষজ্ঞদের যার যে ক্ষেত্র আছে তারা নিঃসন্দেহে এ বিষয়গুলো ভাবছেন। শিক্ষকদের সমন্বয়হীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষকরা যদি জানান তাহলে যে কোনো সাহায্য করতে প্রস্তুত আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
