Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

করোনা পরিস্থিতি

ব্যবহার বৃদ্ধিকে পুঁজি করে আদার দামে নৈরাজ্য

এবার কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে দেশি আদার দাম * সরবরাহ ও পরিবহন ভাড়া বেশির অজুহাত * অনিয়মে কঠোর শাস্তি - মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার

Icon

ইয়াসিন রহমান

প্রকাশ: ১০ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যবহার বৃদ্ধিকে পুঁজি করে আদার দামে নৈরাজ্য

করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে গরম পানির সঙ্গে কিংবা চায়ের সঙ্গে আদা ব্যবহারের কথা আলোচিত হওয়ায় বাজারে পণ্যটির চাহিদা বেড়েছে। ফলে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরপরই সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয় সব ধরনের আদার দাম।

এ সময় রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতি কেজি আমদানি ও দেশি আদা ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। ওই পরিস্থিতিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বাজার তদারকিতে পণ্যটির দাম ১৪০-১৬০ টাকা কেজি হলেও পণ্যটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্য থামছে না। এবার কারসাজি করে আমদানি করা আদার দাম না বাড়ালেও সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি আদার দাম ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

আদার বাড়তি দামের চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার মূল্য তালিকায় লক্ষ্য করা গেছে। টিসিবি বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা আদার দাম ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমলেও দেশি আদার দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশে আদার চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে অসাধুরা সুযোগ বুঝে অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা এবার আমদানি করা আদার দাম না বাড়িয়ে দেশি আদার দাম বাড়িয়েছে। কারণ আমদানি করা আদা কত টাকা কেজি আমদানি করা হয়েছে, ভ্যাট ট্যাক্সসহ কত টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, কত টাকা মুনাফা করা হচ্ছে, তা সহজেই বের করা যায়। কয়েকদিন আগে আদার দাম নিয়ন্ত্রণে আনার সময় সরকারের নজরদারিতে ব্যবসায়ীদের এ কারসাজি ধরা পড়ে।

তাই এবার অসাধু ব্যবসায়ীরা আমদানি করা আদার দাম না বাড়িয়ে দেশি আদার দিকে নজর দিয়েছে। যাতে করে দাম বাড়ালেও তদারকি টিম সহজে না ধরতে পারে।

রাজধানীর রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজার ও জিনজিরা কাঁচাবাজার রোববার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন প্রতিকেজি দেশি আদা বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২২০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ১৪০-১৫০ টাকায়।

তবে রোজার শুরুতে বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩১০ টাকায়। আমদানি করা আদার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে। এ দিন প্রতিকেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৬০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ১৭০-১৮০ টাকায়। রোজা শুরুর আগে আমদানি করা আদা খুচরাতে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৫০-৩৬০ টাকা।

রায় সাহেব বাজারের খুচরা বিক্রেতা মকবুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাজারে আমদানি করা আদার সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু দেশি আদার সরবরাহ কম। যে কারণে দাম বাড়তি। তিনি জানান, পাইকাররা আবার টালবাহানা শুরু করেছে। তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। যে কারণে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারের পাইকারি আদা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দেশে করোনা পরিস্থিতিতে পরিবহনে পণ্য আনা-নেয়ায় ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। পরিবহন পাওয়া গেলেও বেশি টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আদা আনতে বেশি টাকা ভাড়া লাগছে। যে কারণে দেশি আদার দাম বেশি। তবে তারা জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা আদার মজুদ বাড়ায় দাম কমেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, রোজার আগেই করোনা পরিস্থিতিতে আদার চাহিদা বাড়ায় এক শ্রেণির অসাধু বিক্রেতা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছে। পেঁয়াজের পর এবার আদা নিয়ে তারা শুরু করেছে প্রতারণা। আসন্ন ঈদ ও চলমান করোনার প্রাদুর্ভাবকে পুঁজি করে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা আদা সিন্ডিকেট করছেন।

তিনি জানান, গত কয়েকদিন আগে রাজধানীর শ্যাম বাজারের পাইকারি আড়তে অভিযানকালে এলসিতে আদার সর্বোচ্চ ৯৭ টাকা কেজি থাকলেও ওই আদা আমদানিকারকরা ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছে ২৩৫-২৪০ টাকা কেজি, যা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। আর ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়। তিনি বলেন, অভিযানকালে শ্যামবাজারে ফয়সাল এন্টারপ্রাইজে মূল্য তালিকায় আদার দাম ২৩৫ টাকা কেজি লেখা দেখা যায়।

তাদের কাছে ক্রয়মূল্যের রসিদ অর্থাৎ কেজিপ্রতি কিনতে কত টাকা পড়েছে সেটি দেখতে চাওয়া হয়। এ সময় তারা ক্রয় রসিদ দেখাতে পারেননি। তারা বলেন, চট্টগ্রামের আমদানিকারকরা আমাদের কাছে পণ্য দেয়, আমরা তা কমিশনে বিক্রি করি।

আমদানিকারক ২৩৫ টাকা কেজি বিক্রয় করতে বলেছেন, বলে জানান শ্যামবাজারের এ পাইকারি পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে চট্টগ্রামের ব্রাদার্স ট্রেডার্স ইন্টারন্যাশনাল থেকে ৪৫০ ব্যাগ আদা কিনেছে। তখন রসিদও দেখিয়েছিল। কিন্তু রসিদে ব্যাগের সংখ্যা, পণ্যের ওজন, পরিবহন ভাড়া সব লেখা থাকলেও ক্রয় মূল্য লেখা ছিল না। এটিই শুভঙ্করের ফাঁকি। তারা মূল্য না লিখে ইচ্ছামতো দাম আদায় করেছে।

তিনি জানান, তখন সরকারি পণ্য আমদানি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেনেছি দেশের আমদানিকৃত আদার সর্বোচ্চ এলসি মূল্য কেজিতে ৯৭ টাকা। তাই সেই অভিযানকালে সরাসরি খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ব্রাদার্স ট্রেডার্স ইন্টারন্যাশনালকে ফোন করে আদার দাম জানতে চাওয়া হয়। এই সময় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের এলসি আদার দাম পড়েছে কেজি ১০০ টাকা।

খরচ নিয়ে দাম পড়ে ১১০ টাকা। তাহলে ২৩৫ টাকায় কেন বিক্রি করছেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া হলে কোনো সঠিক তথ্য জানাতে পারেননি। পরে বেশি দামে পণ্য বিক্রির অপরাধে ফয়সাল এন্টারপ্রাইস ও মেসার্স আয়নাল অ্যান্ড সন্সকে শাস্তির আওতায় আনা হয়।

এছাড়া সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করা হলে সারা দেশে আদার দাম কেজিতে ১৪০-১৬০ টাকা চলে আসে। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি নতুন করে এবার দেশি আদার দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই এবার চিরুনি অভিযান করা হবে। কোনো অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

করোনাভাইরাস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম