Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

কাজেমীর মৃত্যুতে দুই গভর্নরের অভিমত

বৈদেশিক ও মুদ্রানীতির শিক্ষক হারাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

Icon

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বৈদেশিক ও মুদ্রানীতির শিক্ষক হারাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান দুই গভর্নর বলেছেন, আল্লাহ মালিক কাজেমী ছিলেন বৈদেশিক ও মুদ্রানীতিতে অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংক একজন বৈদেশিক ও মুদ্রানীতির শিক্ষককে হারিয়েছে।

তার কাছে অসংখ্য ব্যাংকার শিখেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা কাজেমীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তারা বলেন, তার অবদানের কথা সব সময় স্মরণ রাখব। শনিবার যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে দুই গভর্নর এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির বলেন, আল্লাহ মালিক কাজেমী ছিলেন দেশের আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতের কিংবদন্তি।

কয়েক দশক ধরে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যবান সম্পদ ছিলেন। তার মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হল। কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় এই ভেবে যে- তার শূন্য স্থান কাকে দিয়ে পূরণ করব।

ফজলে কবির আরও বলেন, আমার বহু সহকর্মী ৩০ বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে আল্লাহ মালিক কাজেমীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। ৪৪ বছর আগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক ও মুদ্রানীতি প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে ব্যাংকের বিদেশনীতি প্রণয়নে তার দক্ষতার জুড়ি নেই। আর মুদ্রানীতির শিক্ষক ছিলেন তিনি। ফজলে কবির বলেন, “আমি মুদ্রানীতি ঘোষণা করতাম, আড়াল থেকে সব ঠিক করে দিতেন তিনি। মূলত এ ক্ষেত্রে আমি কেবল ‘শো-পিস’। সব কৃতিত্ব ছিল তার। ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআরের বিষয়ে বিভিন্ন সময় আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতেন। বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা করতেন।” কাজেমী ছিলেন নীতির ক্ষেত্রে আপসহীন।

এছাড়া ব্যাংকের অকশন, লটারি, বিল-বন্ডে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি সবসময়ই সহকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছেও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র ছিলেন। তার প্রতিভার বৈচিত্র্য স্বভাবতই বিশদভাবে ব্যাখ্যার ঊর্ধ্বে। কাজেমীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফজলে কবির বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিটি কাজে তার অভাব প্রচণ্ডভাবে অনুভব করব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আল্লাহ মালিক কাজেমীর জানাশোনা খুব ভালো ছিল। প্রথমে ডেপুটি গভর্নর পরে উপদেষ্টার পদমর্যাদা তাকে দেয়া হয়। সে পদের সম্মান তিনি রেখেছেন পদে পদে। দেখিয়েছেন অসাধারণ যোগ্যতা। মৃদুভাষী কাজেমী ছিলেন একজন সজ্জন মানুষ। ব্যাংকিং খাতের বিদেশনীতি এবং মুদ্রানীতিতে তার অবদান অসামান্য। শুধু নীরবে তিনি কাজ করতেন। প্রতিদান বা প্রশংসার আশা করতেন না। নীতির ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আপসহীন।

উল্লেখ্য, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশিষ্ট ব্যাংকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা পরামর্শক আল্লাহ মালিক কাজেমী শুক্রবার রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭২ বছর। শনিবার রায়েরবাজার কবরস্থানে সরকারি নিয়ম মেনে তার লাশ দাফন করা হয়। আল্লাহ মালিক কাজেমী ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। এরপর ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদে থেকে নিয়মিত চাকরি শেষ করেন।

২০০৮ সালে তাকে চুক্তিভিত্তিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর কয়েক দফায় মেয়াদ বেড়ে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি ওই পদে বহাল ছিলেন। বৈদেশিক বাজার ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, তারল্য ব্যবস্থাপনা, মুদ্রানীতি প্রণয়নসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার বিচরণ ছিল। ব্যাংক খাতের যে কোনো সমস্যা, নতুন নীতি প্রণয়নে তিনি পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয়, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ব্যবসায়ীরাও তার কাছে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিতেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম