ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানির তোড়জোড়
এটা কৃষকের জন্য সুখবর নয় : ড. নাজনীন আহমেদ * রাজধানীর খুচরা বাজারে কেজিতে এক দিনে দাম কমেছে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে ভরা মৌসুমে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ শনিবার স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ঢুকতে শুরু করেছে। এতে বাজারে নিত্যপণ্যটির দাম হু-হু করে কমছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক দিনের ব্যবধানে শনিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০-১৫ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা।
আর আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা।
বিআইডিএস’র সিনিয়র ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ভারত থেকে বছরের সব সময় পেঁয়াজ আমদানি হয়। কিন্তু গত বছর দেশটিতে বন্যার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়।
এতে ভারত তাদের চাহিদা মেটাতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে সে সময় বাংলাদেশের আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারেনি।
আবার ভারত রপ্তানি শুরু করায় দেশের আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আনতে শুরু করেছে। তবে এমন সময় রপ্তানি শুরু হয়েছে, যে সময় দেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম।
তাই এটা কৃষকের জন্য সুখবর নয়। যেহেতু দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসছে, সেহেতু কৃষক যাতে দাম পায় সেজন্য সরকারের উচিত দেশি পেঁয়াজগুলো গুদামজাত করার ব্যবস্থা করা।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে ভারতের পেঁয়াজ। দেশটি থেকে শনিবার প্রথম পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশের বাজারে এসেছে।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে প্রথম পেঁয়াজবাহী একটি ট্রাক। এতে ভারত থেকে ১৯ টন পেঁয়াজ আসে বলে জানিয়েছে স্থলবন্দরের আমদানিকারক।
শিবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে শনিবার ৭টি ট্রাক দেশে ঢুকেছে। এই ট্রাকে ১৫০ টন পেঁয়াজ ছিল। স্থলবন্দরে সহকারী কমিশনার কাস্টমস মমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশীদ হারুন জানান, প্রথম চালানটির আমদানি মূল্য পড়েছে প্রতি কেজি প্রায় ২০ টাকা।
বাবু এন্টারপ্রাইজ নামে এক আমদানিকারক এই পেঁয়াজ আমদানি করে। প্রথম দিনে এক ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও ধাপে ধাপে পেঁয়াজ আমদানি বাড়বে।
অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত।
সম্প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় দেশটি। পহেলা জানুয়ারি থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দেয়।
এর পরপরই দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি গ্রহণ ও এলসি খোলা শুরু করে।
ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছে হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা।
পেঁয়াজ আমদানিকারক বাবু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহফুজার রহমান জানান, প্রথম পর্যায়ে এক ট্রাক (১৯ টন) পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।
প্রতি টন ২৫০ ডলারে ভারত থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করা হয়েছে। দেশের বাজারে তা ২৩ থেকে ২৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি করব।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, শনিবার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। ভোমরা কাস্টমস সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ভোমরার বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙা বন্দরে ২৫ ট্রাকেরও বেশি পেঁয়াজ দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রতি ট্রাকে ২৫ থেকে ৩০ টন পেঁয়াজ আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আরাফাত হোসেন জানান, সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পর আজ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে বন্দরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে।
তিনি জানান, এই ধারা চলতে থাকলে দেশে পেঁয়াজ বাজারের দামের উর্ধ্বমুখী প্রবাণতা হ্রাস পাবে।
