যুবকে ক্ষতিগ্রস্তদের ভরসা এখন উচ্চ আদালত
বাণিজ্যমন্ত্রীকে পদক্ষেপ নিতে অর্থমন্ত্রীর অনুরোধ
আলমগীর হোসেন
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রতারক প্রতিষ্ঠান ‘যুবক’-এর সমস্যা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যরা উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিলেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি এখনো। ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে রিট দায়েরের পর হাইকোর্ট থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ-প্রশ্নে রুল জারি করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মামলাটি আর আদালতে ওঠেনি।
তবে শিগগির মামলাটি অন্য একটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী জানিয়েছেন। এদিকে দীর্ঘদিনেও যুবক-এর ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের দায় পূরণ না-হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা। অর্থ সংকটে তারা অত্যন্ত মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যুবক-এর অধীন চিহ্নিত সম্পত্তি বিক্রি করে তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের দায় পূরণ করা সম্ভব। কারণ, এখনো প্রতিষ্ঠানটির অনেক সম্পদ রয়েছে।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হলে ২০১৬ সালের ২৪ জুন এ বিষয়ে একটি অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী। এতে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করুন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বাইরে যুবক-এর ছয় হাজার কোটি টাকার বেদখল সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে নিয়ে তা বিক্রির মাধ্যমে গ্রাহকদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে প্রশাসক নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রীকে।
যুবক ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির সভাপতি মুকুল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, প্রতারক প্রতিষ্ঠান যুবক-এর সমস্যা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত সরকারি দুটি কমিশন ও আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি আজও। পরে বাধ্য হয়ে আমরা ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিই। রিটে ছয়জন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে বিবাদী করা হয়। সেখানে মুখ্য সচিবসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র, আইন ও ভূমিসচিব রয়েছেন। এ ছাড়া সরকারের গঠিত যুবক কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকার উপকমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজি, পুলিশ কমিশনার ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানও রয়েছেন। আদালত শুনানি শেষে সমস্যা নিরসনে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ-প্রশ্নে রুল জারি করেন। কিন্তু করোনার কারণে সেই রিটটি আর শুনানি হয়নি।
আবেদনের পক্ষের আইনজীবী সৈয়দা নাসিরন যুগান্তরকে বলেন, রিট মামলাটি শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল দিয়েছিলেন। সর্বশেষ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের বেঞ্চে শুনানির জন্য ছিল। করোনাভাইরাসের সময় বেঞ্চটি ভেঙে যায়। পরে আর কোনো বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়নি। আশা করছি, খুব শিগগির বেঞ্চের নজরে আনা হবে।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা যেহেতু আইনের আশ্রয় নিয়েছেন সেহেতু আদালত কী সিদ্ধান্ত দেন, সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে বিষয়টি দ্রুত আদালতে উপস্থাপন করা দরকার।
জানা গেছে, যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) ক্ষতিগ্রস্ত তিন লাখ তিন হাজার ৭০০ গ্রাহক রয়েছে। তাদের দায়ের করা রিট পিটিশনে বলা হয়, যুবকের সমস্যা নিষ্পত্তি করতে ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিনকে চেয়ারম্যান করে কমিশন গঠন করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে ২০১১ সালে ৪ মে দ্বিতীয় একটি কমিশন গঠন করে সরকার। পাশাপাশি ২০১৪ সালে ২৫ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কমিশন ও কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।
জানা গেছে, যুবক কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ফরাস উদ্দিন তার প্রতিবেদনে বলেছিলেন, যুবকের মোট গ্রাহক দুই লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ জন। এসব গ্রাহক যুবকের কাছে পাওনা দুই হাজার ১৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তবে যুবকের সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের দায় দেনা পরিশোধ সম্ভব।
কাজী রফিকুল ইসলামের কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে যুবক। তিন লাখ তিন হাজার ৭০০ গ্রাহকের কাছ থেকে এ টাকা নেওয়া হয়। অর্থ গ্র্রাহককে ফেরত দিতে ও সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য যুবক-এ প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিশন।
জানা গেছে, দুটি কমিশন ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির স্থায়ী একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে যুবক-এর স্থাবর ও অস্থাবর সব সম্পত্তি সরকারের হেফাজতে গ্রহণসহ ২৬ সুপারিশ করা হয়েছিল।
জানা গেছে, যুবক-এর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে বলা হয়, যুবক-এর অধীন থাকা সম্পত্তির পরিমাণ কম, যা দিয়ে গ্রাহকদের দায় মেটানো সম্ভব নয়। ফলে এ ব্যাপারে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে তা সমাধান করবে কি না, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
তবে যুবক ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটি দেশব্যাপী সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে দুই হাজার ২৬৮ একর। বেনামে রয়েছে আরও এক হাজার একর। এর মধ্যে ৩৫টি জেলায় ১৮টি বাড়ি, ১০টি প্রকল্প ও ৭১টি খণ্ড জমি আছে। জমির বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। যা বিক্রি করলে গ্রাহকদের পাওনার চেয়ে বেশি হবে। এসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব তুলে ধরে সংগঠনটি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে।
