Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

বগুড়ার গোহাইল ইসলামিয়া কলেজ

পূর্বসূরির স্বাক্ষর জাল করে অধ্যক্ষের নিয়োগ বাণিজ্য!

অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে মাউশির দুই সদস্যের কমিটি * অধ্যক্ষসহ আট শিক্ষক নিয়োগ ও বিভিন্ন দুর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে

Icon

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শাজাহানপুরের গোহাইল ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সাবেক অধ্যক্ষের (পূর্বসূরি) স্বাক্ষর জাল করে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলে প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটির সভাপতি ও নিয়োগবঞ্চিতরা অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি তারা শিক্ষামন্ত্রী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চলের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ মুকুল বলেছেন, তার বিরুদ্ধে বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র।

লিখিত অভিযোগে অধ্যক্ষসহ আট শিক্ষক নিয়োগ ও বিভিন্ন দুর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে মাউশির দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি। অভিযোগে বলা হয়-২০০২ সালে কলেজটির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন মোতাহার হোসেন মুকুল। অধ্যক্ষ আবদুল জোব্বার অবসরে গেলে ২০১০ সালে মুকুল তৎকালীন গভর্নিং বডির সহযোগিতায় ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক দেলোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। এরপর লোক দেখানো নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে মুকুল নিজেই ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দেন।

অভিযোগে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখার সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আফজাল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব না দিয়ে টাকার বিনিময়ে জুনিয়র শিক্ষক বাদশা আলমকে অধ্যক্ষ মুকুল দায়িত্ব দিয়েছেন। অধ্যক্ষ মুকুলের স্ত্রী পৌরনীতি ও সুশাসন বিভাগের প্রভাষক লাভলী আকতারের নিয়োগ নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ২০১১ সালে বিষয়টি খোলার আগে শিক্ষক তালিকায় লাভলীর নাম ছিল না। সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল জোব্বারের স্বাক্ষর জাল করে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রুখশাইনা জেসমিন জাহানকে (সাবেক অধ্যক্ষের মেয়ে) অনুপস্থিতির অজুহাতে বরখাস্ত করা হয়। এ ব্যাপারে তাকে চিঠি পর্যন্ত ইস্যু করা হয়নি।

অভিযোগ, সাবেক অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল করে জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রদর্শক ফারজিনা আকতারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলা বিভাগের প্রভাষক হাওয়া খাতুনের স্থলে আম্বিয়া খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ হাওয়া খাতুনের পদ কখন শূন্য হয়েছে তা কেউ জানেন না। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শাহজাহান সিরাজের মৃত্যু হলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই আবদুল হান্নানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বেতন-ভাতা না পাওয়া এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে কম্পিউটার শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক আজিজুর রহমান অনিয়মিত হয়ে পড়েন। সাবেক অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল করে প্রভাষক আজিজুরের স্থলে কামাল হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

গণিত বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রভাষক (সৃষ্ট পদ) উদয় কুমার রায় বিষয়টি অনুমোদনের শর্তে ২০১১ সালে যোগ দেন। তাকে বেতন ও এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়েও তা দিতে অধ্যক্ষ মুকুল ব্যর্থ হন। তাকে নিয়োগ দিয়ে উন্নয়নের নামে চেকের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে প্রায় তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এরপর উদয় আরও টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে অনুপস্থিতি দেখিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হলেও চিঠি দেওয়া হয়নি। উদয় কুমার রায় জানান, টাকা ফেরত চাইলে বর্তমান প্রতিষ্ঠান থেকেও তাকে চাকরিচ্যুৎ করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাকে হত্যারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

মজনু সরকার নামে একজনের অভিযোগ, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে তাকে নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে অধ্যক্ষ মুকুল তার কাছ থেকে আট লাখ টাকা নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা না দেওয়ায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অন্যজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার টাকা এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি। টাকা চাইলে তাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। মজনু আরও জানান, বাধ্য হয়ে তিনি অধ্যক্ষ মুকুলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।

আবদুল মতিন নামে একজন জানান, কম্পিউটার ল্যাব সহকারী পদে চাকরির জন্য হামিম নামে একজনের মাধ্যমে তিনি অধ্যক্ষ মুকুলকে ছয় লাখ টাকা দিয়েছেন। ১২ লাখ টাকা চুক্তি হলেও ১৮ লাখ টাকা নিয়ে অপরজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এভাবে অধ্যক্ষ মুকুল কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।

অধ্যক্ষ মুকুলসহ আটজন শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন গোহাইল ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি আলী ইমাম ইনোকী। অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন মুকুল জানান, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হওয়ায় প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করছেন। তিনি আরও জানান, মিথ্যা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাউশি থেকে দুই সদস্যের কমিটি প্রতিষ্ঠানটিতে তদন্ত করে গেছে।

মাউশির মহাপরিচালকের নির্দেশে রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদ ৬ ফেরুয়ারি কলেজটি তদন্ত করেন। অধ্যক্ষ, শিক্ষক, গভর্নিং বডির সদস্য, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বঞ্চিত ব্যক্তিদের সঙ্গে তারা কথা বলেন। এ ব্যাপারে প্রফেসর ড. কামাল হোসেন জানান, তদন্ত শেষ হয়েছে। মাউশির মহাপরিচালকের কাছে শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তবে তদন্তের ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম