ধাক্কা কাটাতে পারেনি ৭৯ শতাংশ মানুষ
করোনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী
যুগান্তর প্রতিবেদন
০৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কোভিড-১৯ এর কারণে গভীর সংকটে পড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। প্রায় ৭৯ শতাংশ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনো কোভিডেরে ধাক্কা কাটাতে পারেনি। এই সংকট কাটাতে গড়ে আরও ১৩ মাস সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তাদের আরও গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। এসব প্রান্তিক মানুষ ঋণের জালে আটকে যেতে পারেন।
বৃহস্পতিবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশের ‘কীভাবে অতিমারিকে মোকাবিলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক খানা জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে করোনা মহামারির সংকট মোকাবিলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য একটি সামাজিক সংহতি তহবিল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই তহবিলে সরকার, করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইশতিয়াক বারী। বক্তব্য রাখেন প্লাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৬০০ খানার ওপর এই জরিপ করা হয়। চর, হাওর, উপকূল, বস্তি, দলিত, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, প্রবাসফেরত, পিছিয়ে পড়া নারী এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে জরিপের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইশতিয়াক বারী। ফলাফলে বলা হয়, করোনার আঘাত সামলাতে প্রথমে সঞ্চয় ভেঙেছেন প্রান্তিক মানুষ। এরপর ঋণ করেছেন। তারা ভোগও কমিয়েছেন। প্রথমে খাবারে, পরে গৃহস্থালির খরচ কমিয়েছেন। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, করোনা সংকটের সময় এই প্রান্তিক শ্রেণির ৮০ শতাংশ পরিবার খাবার কিনতে খরচ কমিয়েছে। আর ৬৪ শতাংশের বেশি পরিবারকে খাদ্যবহির্ভূত খাতে খরচ কমাতে হয়েছে। প্রায় ৬১ শতাংশ পরিবার ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া গবাদিপশু বিক্রি করে, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে, সরকারি সহায়তা, সোনাদানা ও জমি বিক্রি করেও অনেকে জীবন ধারণ করছেন।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চলমান অতিমারি জাতীয়ভাবে যে প্রভাব ফেলেছে, এর বেশি বিপদে ফেলেছে প্রথাগত বিপন্ন গোষ্ঠীকে। এমনকি যারা আগে বিপন্ন ছিলেন না, তারাও সংকটে পড়েছেন। যেমন প্রবাসফেরত মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা। তাই এই বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ২-৩ বছরের একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করতে হবে। সরকারের সম্পদের জোগান দিতে একটি সামাজিক সংহতি তহবিল তৈরি করা যেতে পারে। এতে সরকারের পাশাপাশি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা উচিত। এ ক্ষেত্রে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ দেন। এ ধরনের তহবিলে কে কত টাকা দিচ্ছেন, কোথায় কত খরচ হচ্ছে, তা মুহূর্তেই হালনাগাদের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক পরিবার ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে। তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। এ বিষয়ে এখনই ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
করোনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী
ধাক্কা কাটাতে পারেনি ৭৯ শতাংশ মানুষ
কোভিড-১৯ এর কারণে গভীর সংকটে পড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। প্রায় ৭৯ শতাংশ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনো কোভিডেরে ধাক্কা কাটাতে পারেনি। এই সংকট কাটাতে গড়ে আরও ১৩ মাস সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তাদের আরও গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। এসব প্রান্তিক মানুষ ঋণের জালে আটকে যেতে পারেন।
বৃহস্পতিবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশের ‘কীভাবে অতিমারিকে মোকাবিলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক খানা জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে করোনা মহামারির সংকট মোকাবিলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য একটি সামাজিক সংহতি তহবিল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই তহবিলে সরকার, করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইশতিয়াক বারী। বক্তব্য রাখেন প্লাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৬০০ খানার ওপর এই জরিপ করা হয়। চর, হাওর, উপকূল, বস্তি, দলিত, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, প্রবাসফেরত, পিছিয়ে পড়া নারী এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে জরিপের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইশতিয়াক বারী। ফলাফলে বলা হয়, করোনার আঘাত সামলাতে প্রথমে সঞ্চয় ভেঙেছেন প্রান্তিক মানুষ। এরপর ঋণ করেছেন। তারা ভোগও কমিয়েছেন। প্রথমে খাবারে, পরে গৃহস্থালির খরচ কমিয়েছেন। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, করোনা সংকটের সময় এই প্রান্তিক শ্রেণির ৮০ শতাংশ পরিবার খাবার কিনতে খরচ কমিয়েছে। আর ৬৪ শতাংশের বেশি পরিবারকে খাদ্যবহির্ভূত খাতে খরচ কমাতে হয়েছে। প্রায় ৬১ শতাংশ পরিবার ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া গবাদিপশু বিক্রি করে, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে, সরকারি সহায়তা, সোনাদানা ও জমি বিক্রি করেও অনেকে জীবন ধারণ করছেন।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চলমান অতিমারি জাতীয়ভাবে যে প্রভাব ফেলেছে, এর বেশি বিপদে ফেলেছে প্রথাগত বিপন্ন গোষ্ঠীকে। এমনকি যারা আগে বিপন্ন ছিলেন না, তারাও সংকটে পড়েছেন। যেমন প্রবাসফেরত মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা। তাই এই বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ২-৩ বছরের একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করতে হবে। সরকারের সম্পদের জোগান দিতে একটি সামাজিক সংহতি তহবিল তৈরি করা যেতে পারে। এতে সরকারের পাশাপাশি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা উচিত। এ ক্ষেত্রে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ দেন। এ ধরনের তহবিলে কে কত টাকা দিচ্ছেন, কোথায় কত খরচ হচ্ছে, তা মুহূর্তেই হালনাগাদের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক পরিবার ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে। তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। এ বিষয়ে এখনই ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই।