মন্ত্রণালয়কে দুই সংগঠনের চিঠি
পদক্ষেপ নেই ক্ষতিগ্রস্ত পোলট্রি শিল্প পুনর্গঠনে
কাঁচামাল সরবরাহকারীদের ওপর উৎসে কর, যন্ত্রাংশ আমদানিতে এটি ও এআইটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব
মিজান চৌধুরী
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত পোলট্রি শিল্প পুনর্গঠনে পদক্ষেপ নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। এছাড়া নতুন করে কিছুক্ষেত্রে ‘ভ্যাট ও উৎসে কর’ পরিবর্তনের কারণে আগামীতে শিল্প উদ্যোক্তাদের ব্যয় বাড়বে। বেড়ে যাবে খাদ্যের উৎপাদন খরচও। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মুরগি ও ডিমের বাজারে।
সম্প্রতি এসব তুলে ধরে পোলট্রি খাতের দুটি সংগঠন ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিয়াব) ও বির্ডাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে। এতে শিল্পের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে এমন সব প্রস্তাব প্রত্যাহার করে বাজেট অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিয়াব) সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, বাজেটে পোলট্রি শিল্পের জন্য নতুন কিছু নেই। আরও কিছু সুযোগ দেওয়া দরকার ছিল। উদ্যোগ নেওয়া হয়নি পোলট্রি খাদ্যের দাম কমানোরও। তিনি বলেন, এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের আগাম কর দিতে হয়। বছর শেষে করপোরেট করের সঙ্গে সমন্বয় করে বর্ধিত টাকা ফেরত দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু এ ধরনের অনেক টাকা এ শিল্পের উদ্যোক্তারা পাওনা আছে। এ থেকে উদ্ধারের একমাত্র উপায় আগাম কর দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা।
প্রস্তাবিত বাজেটে পোলট্রি শিল্পের জন্য খাদ্য উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানির ওপর কর ও শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে দেশের ভেতরে আমদানিকারক বা সরবরাহকারীর কাছ থেকে একই পণ্য (কাঁচামাল) ক্রয়ের ওপর বর্ধিত হারে উৎসে মূসক কর্তনের (ভিডিএস) প্রস্তাব করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের মতে, এটা কার্যকর হলে খাদ্য উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে। বর্তমানে এ শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে- বিশ্বব্যাপী খাদ্যমূল্য প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি। এটি কমিয়ে আনতে হলে বাজেটে উৎসে কর কর্তন অব্যাহতি দিতে হবে।
বর্তমান এ খাতে নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণের ওপর অগ্রিম কর (এটি) এবং আগামী আয়কর (এআইটি) আরোপ করা আছে। এনবিআরের কাছে লেখা পত্রে বলা হয়, সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনের স্বার্থে এবং পোলট্রি শিল্প পুনর্গঠনের জন্য এটি এবং এআইটি প্রত্যাহার জরুরি। বলা হয়েছে, করোনা মহামারিতে পোলট্রি খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় প্রতিটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রাণিজ আমিষের জোগান নিরবচ্ছিন্ন থাকতে হবে। ফলে নতুন বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এ শিল্পের খামার স্থাপনকালে যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণ আমদানির ওপর এটি প্রত্যাহার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বির্ডাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) সভাপতি রকিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, নতুন শিল্প স্থাপন করতে এ উদ্যোক্তাকে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর আগাম কর (এটি) দিতে হয়। এতে নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এজন্য বাজেটে এটি প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিমের কাছে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, করোনাকালে ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনে ভয়াবহ ধস নেমেছে। এতে পোলট্রি শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এ শিল্প পুনর্গঠন প্রয়োজন। প্রস্তাবে আগামী বাজেটে নতুন যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণ আমদানির জন্য এইচএস কোড সংযোজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে এ শিল্পের খাদ্য উৎপাদন শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহকারীদের ওপর বর্ধিত হারে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে উৎসে কর আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ কৃষক এবং ক্ষুদ্র সরবরাহকারীরা কাঁচামাল ভুট্টা, চালের কুঁড়াসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবেন। যা সরকারের কাছে কাম্য নয়। সেখানে আরও বলা হয়, শিল্পে কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ বা দেশের অভ্যন্তরে ক্রয়ের ক্ষেত্রে উৎসে কর (টিডিএস) সর্বোচ্চ ১ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) হিসাবে ২০২০ সালের লকডাউনে সারা দেশে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পোলট্রি ফার্ম করোনায় লোকসানে বন্ধ হয়ে যায়। করোনায় সব মিলে এ খাতে ক্ষতি প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বির্ডাস ইন্ডাস্ট্রি খাতে ৪৫৮ কোটি, ফিড শিল্পে ৭৫ কোটি, বাণিজ্যিক পোলট্রি (ডিম ও মাংস) খাতে ৫০৩ কোটি, প্রসেসড ইন্ডাস্ট্রিতে ৩১ কোটিও ওষুধ মিনারেল প্রিমিক্সসহ অন্যান্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ৮৩ কোটি টাকা।
