Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত

বিহারে-বিহারে সুখ ও শান্তি কামনা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিহারে-বিহারে সুখ ও শান্তি কামনা

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বরগুনার তালতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বুধবার বৌদ্ধদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা উদযাপিত হয়েছে। বিহারে বিহারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির কামনায় বাতি প্রজ্বালন ও ফানুস উড়ানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে এ উৎসব উদযাপিত হয়েছে। বৌদ্ধভিক্ষুদের দীর্ঘ তিন মাস বর্ষবাস অধিষ্ঠান শেষে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়ে থাকে শুভ প্রবারণা। এদিকে বুধ ও বৃহস্পতিবার বান্দরবানে মারমা জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ উৎসব উদযাপিত হয়েছে। এই উৎসবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের স্মরণে আকাশে উড়ানো হয় রং-বেরংয়ের শত শত ফানুস বাতি।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, শুভ প্রবারণা উপলক্ষ্যে বুধবার সকালে রাঙামাটি রাজবন বিহার ও সদর উপজেলার যমচুগ বনাশ্রম ভাবনাকেন্দ্রসহ বিহারে বিহারে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর প্রাতরাশ, পিণ্ডদান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধ মূর্তিদান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কারদানসহ নানাবিধ পূজা-অর্চনার আয়োজন করা হয়। অগণিত পুণ্যার্থীর সমাগমে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে রাঙামাটি রাজবন বিহার। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় প্রদীপ প্রজ্বালন। দুপুরে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় সভায় পুন্যার্থীদের উদ্দেশে ধর্মদেশনা দেন রাঙামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ও সিনিয়র ভিক্ষু শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। পুণ্যার্থীদের পক্ষে পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন রাঙামাটি সদরের বালুখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমা। অনুষ্ঠানে অংশ নেন অগণিত পুণ্যার্থী।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে বর্ণিল আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জেলার বিভিন্ন বিহারে বিহারে সুখ,শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বাতি প্রজ্বালন করা হয়। জেলার বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা উপলক্ষ্যে সকাল থেকে পঞ্চশীল পালন, ধর্মীয় দেশনা, ৮৪ হাজার বাতি প্রজ্বালন, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কারদান, বৌদ্ধ মূর্তিদান, চীবর দানসহ নানা ধরনের ধর্মীয় দান করা হয়।

বিকালে জেলা শহরে চেঙ্গী নদীতে জলপ্রদীপ বা কল্প মন্দির মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাসানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রত্যক বিহারে জগতের সুখ ও শান্তি কামনায় ফানুস বাতি উত্তোলন হয়।

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, তালতলীতে রাখাইন সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত হয়েছে। এ উৎসবকে ঘিরে বৌদ্ধবিহারগুলো সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। বুধবার সন্ধ্যার পর পাড়ায় পাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে উড়ানো হয়েছে ফানুস বাতি। সকাল থেকে পাড়ায় পাড়ায় চলছে নানা রকম বাহারি পিঠা, পুলি, পায়েস তৈরির ধুম।

বিহার কমিটির কোষাধ্যক্ষ দেন মং থে রাখাইন বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এ প্রবারণা পূর্ণিমা। এদিন গৌতম বুদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু করেন। এ কারণে এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তালতলী উপজেলার ১৩টি রাখাইন পাড়ায় একযোগে এ উৎসব পালন করেছে। তবে ফানুস উৎসব এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমা জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’। দুদিনব্যাপী উৎসবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের স্মরণে আকাশে উড়ানো রং-বেরংয়ের শত শত ফানুস বাতি। বুধবার সন্ধ্যায় দুদিনব্যাপী উৎসবের প্রথমদিনে বান্দরবান কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার, রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার, সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার, রামজাদী বিহার, স্বর্ণমন্দির বিহার, করোনাপুর বিহারসহ আশপাশের বৌদ্ধ বিহার এবং পাহাড়ের ক্যায়াংগুলো থেকে ফানুস বাতি। রং-বেরংয়ের ফানুসের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে রাতের আকাশ। অনেক দূর থেকে দেখে মনে হয়, যেন রং লেগেছে পাহাড়ের আকাশে।

এছাড়া ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের মূল আকর্ষণ হলো মঙ্গল রথযাত্রা। বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি ময়ূর আকৃতির একটি বিশাল রথ তৈরি করে তার ওপর একটি বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করা হয়। এরপর মঙ্গল রথটি কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহার থেকে রশি দিয়ে টেনে সোমবার রাতে শহরের অলিগলি ঘোরানো হয়। এ সময় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী মোমবাতি জ্বালিয়ে বুদ্ধমূর্তিকে শ্রদ্ধা জানায়। রাতের এ রথযাত্রা এবং ফানুস বাতি উড়ানোর দৃশ্যটি দেখার জন্য রাস্তার দুপাশে ভিড় জমান বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। বেড়াতে আসা পর্যটকরাও ভিড় করেছিলেন উৎসব প্রাঙ্গণে।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাট সদরের নুরপুর বৌদ্ধপল্লি এবং পাঁচবিবি উপজেলার বারোকান্দ্রী সুকুমার সিংহ বৌদ্ধবিহার ও পীরপাল পদ্মবিনা বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধপূজা, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় নির্দেশনা প্রদানসহ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করা হয়। এর মধ্যে বুধবার বিকালে পাঁচবিবির বারোকান্দ্রী সুকুমার সিংহ বৌদ্ধবিহার চত্বরে বিহারের সভাপতি বাবুল সিংয়ের সভাপতিত্বে ভক্তদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় নির্দেশনা প্রদান ও পূজা পরিচালনা করেন বন্দরে সমানন্দ ভিক্ষু।

প্রবারণা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম