Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

চট্টগ্রাম বন্দরের শেড ঠাসা এলসিএল পণ্যে

দ্রুত না নিলে গুনতে হবে চারগুণ জরিমানা

Icon

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দ্রুত না নিলে গুনতে হবে চারগুণ জরিমানা

চট্টগ্রাম বন্দরে জমেছে এলসিএল কনটেইনারে আসা পণ্যের স্তূপ। জাহাজ থেকে খালাস করার পর ডেলিভারি (সরবরাহ) নিতে বিলম্ব করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি বন্দর কর্তৃপক্ষের। শেডগুলোতে পণ্য রাখার জায়গা নেই। ফলে নতুন আসা এলসিএল কনটেইনারের পণ্য আনস্টাফিং (কনটেইনার থেকে নামিয়ে শেডে সংরক্ষণ) করা যাচ্ছে না।

পরিস্থিতি সামাল দিতে শেড থেকে এলসিএল কনটেইনারের (একাধিক আমদানিকারকের পণ্যবাহী) পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নিতে আমদানিকারকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১০ এপ্রিলের মধ্যে পণ্য ডেলিভারিতে প্রত্যাশিত গতি না এলে পরদিন থেকে এলসিএল কনটেইনারের পণ্যের ওপর চারগুণ স্টোর রেন্ট বা গুদাম ভাড়া আরোপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইচ্ছা করে কোনো আমদানিকারক বন্দরের ভেতরে পণ্য ফেলে রাখেন না। শুল্কায়ন জটিলতা, দেশের বাজারে একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমদানিকৃত পণ্যের দাম ও চাহিদা কম থাকাসহ নানা কারণে পণ্য ডেলিভারি নিতে বিলম্ব হয়। এ অবস্থায় জরিমানা আরোপ করলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য নিয়ে দুই ধরনের কনটেইনার আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে শুধু একজন আমদানিকারকের পণ্য বোঝাই কনটেইনারকে বলা হয় এফসিএল কনটেইনার। আর কয়েকজন আমদানিকারকের পণ্য বোঝাই কনটেইনারকে বলা হয় এলসিএল কনটেইনার। বিশ্বের উন্নত বন্দরগুলোর ভেতরে এলসিএল কনটেইনার থেকে পণ্য বের করে বিভিন্ন আমদানিকারককে বুঝিয়ে দেওয়া হয় না। পুরো কনটেইনার নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আমদানিকারকরা নিজেদের পণ্য নিয়ে যান। চট্টগ্রাম বন্দর এর ব্যতিক্রম। এখানে এলসিএল কনটেইনারগুলো বন্দরের ভেতরে খোলা হয়। সব পণ্য বের করে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আমদানিকারকরা কাভার্ড ভ্যান বা ট্রাকে করে পণ্য নিয়ে যান।

এতে বিশাল জায়গা ও সময় বেশি লাগে। আমদানিকরাকরা না নেওয়া পর্যন্ত কনটেইনার থেকে খুলে রাখা পণ্য শেডে থাকে। অন্যদিকে এফসিএল কনটেইনারগুলো (একক মালিকের) খোলা হয় না। সরাসরি লরিতে তুলে আমদানিকারক তার পছন্দের জায়গায় নিয়ে যান। বর্তমানে এলসিএল কনটেইনার থেকে খুলে রাখা পণ্য সময়মতো ডেলিভারি না নেওয়ার কারণেই বন্দর কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে।

২৭ মার্চ বন্দরের পরিচালক (পরিবহণ) স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এলসিএল কনটেইনারের পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নিতে আদমানিকারকদের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এলসিএল কনটেইনারের পণ্য আনস্টাফিংয়ের পর দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও আমদানিকারকরা শেড বা সিএফএস (কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন) থেকে পণ্য ডেলিভারি নিচ্ছেন না। এতে শেডের প্রায় পুরো জায়গা পণ্যে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। ফলে নতুন এলসিএল কনটেইনার থেকে পণ্য আনস্টাফিং করা যাচ্ছে না। বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম অব্যাহত রাখতে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নেওয়া প্রয়োজন। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পণ্য ডেলিভারি পর্যবেক্ষণ করবে বন্দর। এর মধ্যে প্রত্যাশিত গতি না এলে আনস্টাফিংয়ের পর চার দিন ফ্রি টাইমের পরদিন থেকে চারগুণ স্টোর রেন্ট বা গুদাম ভাড়া আরোপ করা হবে। রেগুলেশন্স ফর ওয়ার্কিং চিটাগং পোর্ট (কার্গো অ্যান্ড কনটেইনার) ২০০১-এর ১৬০ ধারা অনুযায়ী এ ভাড়া আরোপ করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফরুক যুগান্তরকে বলেন, ‘শেডে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পণ্য জমে গেছে। ভবিষ্যতে যেন পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে সমস্যা না হয়, সেজন্য দ্রুত পণ্য নিয়ে যেতে সংশ্লিষ্টদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বন্দরে এলসিএল কনটেইনারের পণ্য রাখার শেড আছে ৬টি। যেহেতু শেডে জায়গা কমে এসেছে, তাই নতুন পণ্য রাখতে সমস্যা হচ্ছে।’

একাধিক আমদানিকারক জানান, সমস্যা দুই দিকেই। ব্যবসায়ীরা অনেক সময় পণ্য এনে নানা সমস্যায় পড়ে সময়মতো ডেলিভারি নিতে পারেন না। আবার বন্দরের বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। বন্দরের ভেতরে পণ্য রাখার জায়গা সীমিত। পণ্য না নিলে বন্দর সমস্যায় পড়ে যায়। বন্দর সচল রাখা সবার দায়িত্ব। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে স্থায়ী কোনো সমাধান বের করতে হবে। তা হতে পারে, বন্দরের শেড বৃদ্ধি করা অথবা এলসিএল কনটেইনারের আনস্টাফিং বন্দরের বাইরে নিয়ে যাওয়া। জরিমানা আরোপ করে কিছু সময়ের জন্য সুফল পাওয়া গেলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন যুগান্তরকে বলেন, কেউ বন্দরে ফেলে রাখার জন্য পণ্য আমদানি করেন না। অনেক সময় দেখা যায়, যে পণ্যটি এসেছে তার দাম ও চাহিদা ওই সময়ে বাজারে পড়ে গেছে। তাই লোকসানের আশঙ্কায় আমদানিকারক তখন ডেলিভারি নিতে চান না। আবার অনেক সময় শুল্ক নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। কাস্টমস কখনো কখনো আমদানিকারকের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি শুল্ক দাবি করে বসে। তিন মাসের আন্তর্জাতিক বাজারের আমদানি মূল্যের ডাটা পর্যালোচনা করে কাস্টমস তার ওপর শুল্ক নির্ধারণ করে অনেক সময়। একবার দাম বাড়লে তারা যে শুল্ক নির্ধারণ করে, পরে দাম কমলেও সেই শুল্ক বহাল রাখে। তখন আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। ওই অবস্থায় পণ্য খালাস নিলে লোকসান দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আবার অর্থিক সংকটে পড়েও অনেকে আমদানিকৃত পণ্য ছাড় করিয়ে নিতে পারেন না।

সুজন বলেন, ব্যাংকে এলসি খুলে পণ্য আমদানি করতে হয়। তাই ডেলিভারির ক্ষেত্রে আমদানিকারকের সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে যুক্ত করতে পারলে সমস্যার একটা সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে। যেহেতু ব্যাংক পণ্য আমদানিতে অর্থায়ন করে, তাই ডেলিভারির ক্ষেত্রেও তাদের দায়-দায়িত্ব থাকা উচিত।

বন্দর কন্টেইনার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম