Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

কঠোর নির্দেশেও থামছে না বিদেশ সফর

এবার তিনজনের জন্য ২.৬১ কোটি টাকা

উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহিষ্ণু প্রকল্প * এমন ব্যয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে -পরিকল্পনামন্ত্রী * পরামর্শক খাতে চাওয়া হয়েছে ১৩০ কোটি টাকা * ২৫৮০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব একনেকে অনুমোদন

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এবার তিনজনের জন্য ২.৬১ কোটি টাকা

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সরকারি নানা বিধিনিষেধেও ঠেকানো যাচ্ছে না বিদেশ সফর। সংকটময় মুহূর্তেও চলছে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ভ্রমণের আয়োজন। ‘উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহিষ্ণু প্রকল্প’-এ তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং সরকারি তহবিল থেকে ২৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। ফলে প্রত্যেক কর্মকর্তার পেছনে খরচ হবে প্রায় ৮৭ লাখ টাকা করে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, এ ব্যয় নিয়ে একনেকে আলোচনা হয়েছে। অনুমোদন হলেও এটি পরবর্তীতে সংশোধনের সুযোগ আছে। আশা করি ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) বিষয়টি দেখবেন। 
এদিকে প্রকল্পটিতে শুধু বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণই নয়, আছে দেশীয় প্রশিক্ষণে ১ কোটি ৫০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রস্তাবও। সেই সঙ্গে মোটা অঙ্কে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে চাওয়া হয়েছে ১৩০ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮৮ কোটি ৫৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা এবং সরকারি তহবিলের ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে এর আগে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় কিছুটা আপত্তি তুলেছিল পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বিদেশ প্রশিক্ষণের বিষয়ে কোনো কথাই বলা হয়নি। ওই সভায় বলা হয়েছিল, পরামর্শক ফার্মের পরিবর্তে ব্যক্তি পরামর্শক নিয়োগ করে কাজ করা যায় কি-না, স্থানীয় সরকার বিভাগ তা খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পের প্রস্তাবিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ৬টি কনসালটেন্সি প্যাকেজে ৬০ জন কি এবং ননকি এক্সপার্টের সংস্থান রয়েছে। এত অধিকসংখ্যক ব্যক্তি পরামর্শক নিয়োগ সময়সাপেক্ষ। এছাড়া এডিবির দেওয়া প্রজেক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ম্যানুয়ালে এসব পরামর্শক ফার্মের মাধ্যমে নিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী ফার্মের টার্ম অব রেফারেন্স (টিওআর) ইতোমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে এডিবি।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ডা. মো. সারোয়ার বারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। ফলে এ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। তিনি পরিকল্পনা অধিশাখার যুগ্মসচিব এএইচএম কামরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। জানতে চাইলে কামরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ডিপিপিতে উল্লিখিত তিনজন কর্মকর্তার বেশি বিদেশে প্রশিক্ষণে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা কোন ধরনের প্রশিক্ষণ নেবেন, সেটি কাগজপত্র না দেখে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তিনি জানান, বর্তমান বিদেশ সফর স্থগিত আছে। যখন পরিস্থিতি ভালো হবে, তখন এসব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের অনেক অবকাঠামোসংক্রান্ত কাজ আছে, সুতরাং অনেক পরামর্শক লাগবে। 
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ‘উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহনীয় করতে ঋণ ও অনুদান সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪৩০ কোটি এবং এডিবির ঋণ সহায়তা ২ হাজার ১১৫ কোটি ৬০ লাখ এবং অনুদান ৩৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে ৬৬ দশমিক ৫৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ, পরামর্শক সেবা এবং ৩০৯ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১ হাজার ৪৫ দশমিক ৮০ মিটার ব্রিজ, ১৪০ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার ড্রেনেজ ও ফ্লাড কন্ট্রোল ব্যবস্থা এবং ২১টি স্কুল কাম-সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা। আরও আছে ৪টি সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, ২টি ওপেন স্পেস, ৩টি নেচার বেস সলিউশন, ২২টি বস্তির উন্নয়ন, ২১টি মাল্টিপারপাস মার্কেট এবং ৪টি বাস টার্মিনাল নির্মাণ। 
প্রকল্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রণয়ন করা কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাটেজি (সিডিএস-২০০৬) অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য নেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, উপকূলীয় ১৯টি জেলার মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১১টি জেলা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলোকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চলমান উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো প্রকল্প তৈরির শুরুতে এডিবির নিয়োগ করা প্রজেক্ট প্রিপারেটরি টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স (পিপিটিএ) ১১টি জেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। জেলাগুলো হচ্ছে বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর এবং গোপালগঞ্জ। ৪৩টি পৌরসভায় নির্ধারিত সূচকের ভিত্তিতে নির্বাচিত অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকা অনুযায়ী অগ্রাধিকার অনুসারে চলমান প্রকল্পের আওতায় ৩টি ব্যাচে ১০টি পৌরসভাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে চলমান উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো প্রকল্প প্রণয়নের জন্য এডিবির কান্ট্রি অপারেশন বিজনেস প্ল্যানে (সিওবিপি) ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রাথমিক বরাদ্দ ছিল। প্রকল্পের আওতায় নতুন পৌরসভা অন্তর্ভুক্তির উদ্দেশ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ গঠিত পৌরসভা নির্বাচন কমিটির সভা ২০১৯ সালের ১৩ জুন অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় অগ্রাধিকার তালিকা ও নির্ধারিত সূচক পর্যালোচনা করে ২২টি পৌরসভা দ্বিতীয় পর্বের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সত্যজিত কর্মকার বলেছেন, এটি নিয়ে একনেকে আলোচনা হয়েছে। অনুমোদন দেওয়া হলেও পরবর্তীতে বিষয়টি দেখার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া এটি দীর্ঘ সময় ধরে বাস্তবায়ন করা হবে।
 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম