চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ.লীগ
পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনই বড় চ্যালেঞ্জ
৩ বছরই ভারপ্রাপ্ত থাকতে হবে মোতাহেরুলকে! * রোজার আগেই পূর্ণাঙ্গ করার চিন্তা
শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির দিকে তাকিয়ে আছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। কারণ, সম্মেলনের সাড়ে তিন মাস পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। মোছলেম উদ্দিন আহমদকে সভাপতি ও মফিজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল গত বছরের ১২ ডিসেম্বর। তাদেরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা। তারা কাজ শুরুও করেছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ মারা যাওয়ায় সেটি আর হয়নি। আগের কমিটির ৩ নম্বর সিনিয়র সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আছেন মফিজুর রহমান। এ দুই নেতার ওপরই এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ভার। কিন্তু পদের তুলনায় পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি। নানামুখী সুপারিশ ও চাপ আছে। সব মিলিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন তাদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই তাদের জন্য কঠিন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। যদিও রমজানের মধ্যে বা ঈদের আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার চিন্তা রয়েছে তাদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও নতুন কমিটির মেয়াদ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী তিন বছর মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবেই কমিটিতে থাকতে হবে। পরবর্তী কাউন্সিল যদি চায় গঠনতান্ত্রিকভাবে, তখনই তিনি নিয়মিত বা নতুন করে সভাপতি হতে পারবেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। কারণ, ঐতিহ্যবাহী এই দলে ত্যাগী নেতার অভাব নেই। কাকে রেখে কাকে বাদ দেওয়া হবে বা নেওয়া হবে, সেটি নির্ধারণ করাই কঠিন। তাছাড়া নানা সুপারিশ-চাপ তো থাকবেই। এরপরও আমরা চেষ্টা করব কমিটির জন্য অধিকতর যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করতে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় নেতাদের সুপারিশ এবং মতামতকেও আমরা গুরুত্ব দেব।’
তিনি বলেন, ‘মোছলেম ভাই চেয়েছিলেন কমিটি করে দিতে। কিন্তু তার অসুস্থতাজনিত কারণে শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। তার মৃত্যুর পর স্মরণসভা আয়োজনসহ নানা কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিলম্ব হয়েছে। রোজার মধ্যেই আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারব বলে আশা করছি।’
১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এতে প্রধান বক্তা দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে বিদায়ি কমিটির সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানকে নতুন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নাম ঘোষণা করেন। তাদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মোছলেম উদ্দিন আহমদ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তা আর হয়নি। ৫ ফেব্রুয়ারি মোছলেম উদ্দিন আহমদ মারা যান। ২২ ফেব্রুয়ারি তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে বিগত কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষরিত চিঠিতে দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়।
পটিয়া, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া নিয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটি। কমিটির সদস্য সংখ্যা ৭৫। দিনে দিনে নেতাকর্মী বাড়লেও সে অনুপাতে কমিটিতে পদের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিতে ১০০ থেকে ৩০০ বা এরও বেশি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগে সেটি করা হয়নি। পদসংখ্যা নিতান্তই কম হওয়ায় যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের অনেককে কমিটিতে স্থান দেওয়া সম্ভব হয় না। এমন অনেক নেতা আছেন যুগ যুগ রাজনীতি করলেও পদ-পদবি না পেয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। অনেকে কষ্ট নিয়ে বিদায় হয়েছেন। আবার এমনও দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে পদ-বাণিজ্যের কারণে যোগ্যরা ছিটকে পড়েছেন। অযোগ্যরা পদ কিনে নিয়েছেন টাকার বিনিময়ে। সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে সেই চাপা ক্ষোভও রয়েছে। পদবাণিজ্য হওয়ায় হাইব্রিডরা দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান করে নিয়েছেন। তাছাড়া কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের নানামুখী চাপও থাকে।
সূত্র জানায়, নতুন কমিটিতে বিদায়ি কমিটির ৮০ ভাগই থেকে যেতে চান। আবার তাদের সবাইকে বাদ দিয়ে নতুন করে নেতা নির্বাচন করা হলে সেটা নিয়েও বিতর্কের শেষ থাকবে না। বলা হবে; সব নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসব চাপ মোকাবিলা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে অধিকতর গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি কীভাবে গঠন করবেন, সেটাই দেখার বিষয়।
