Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ইফতারে মাংসের বাহারি পদ ঐতিহ্যবাহী দোকানগুলোতে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রমজানে রাজধানীর ইফতার বাজারে মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পদ বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। এসব ইফতার সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। ক্রেতাদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এবার ইফতারির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলেন, এবার অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ক্রেতা কম।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজার, মোহাম্মদপুর, বেইলি রোডসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা রকম ইফতারির পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। বিশেষ করে চকবাজারের রাস্তায় ক্রেতাদের ভিড়, বিক্রেতাদের চ্যাঁচামেচি-সেই চিরচেনা দৃশ্য।

চকবাজার জামে মসজিদের সামনের রাস্তার একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত বাহারি ইফতারের ভ্রাম্যমাণ দোকান বসছে। এসব দোকান গরু, মাটন, মুরগির রোস্টসহ শতাধিক রকমের উপাদেয় খাবারে পরিপূর্ণ। চকবাজারের বাহারি ইফতারির স্বাদ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভোজনবিলাসীরা। ঐতিহ্যবাহী খানদানি ইফতারি কিনতে দেখা গেছে দীর্ঘ জটলা। প্রতিবছরের মতো এবারও চকবাজারের ইফতারির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ নামের বিশেষ ইফতার। ডাল, চিড়া, খাসির কাবাব, খাসির মগজ, খাসির কলিজা ও মুরগির মাংসসহ ১০ থেকে ১২ রকমের মসলা মিশিয়ে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ তৈরি করা হয়। বিক্রেতা মিজান বলেন, এ বছর বড় বাপের পোলায় খায়’র দাম ৮০০ টাকা কেজি। গত বছর ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার গোশতের কিমা, গরু, খাসি ও মুরগির মাংসের নানা পদের খাবার সাজিয়ে রাখলেও ক্রেতা কম।

নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চকবাজারের ইফতারসামগ্রীর দামও। অতিরিক্ত দামে দিশেহারা ক্রেতা। অনেকে চাহিদার চেয়ে কম কিনছেন, আবার কেউ দরদাম করে না কিনেই খালি হাতে ফিরছেন।

বৃহস্পতিবার চকবাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই বাড়তে থাকে ক্রেতাদের ভিড়। ব্যবসায়ীরা জানান, ইফতারের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে, বিক্রি ততই বাড়বে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার খাসির সুতি কাবাব ১৬০০ টাকা আর গরুর সুতি কাবাব ১৫০০ টাকা এবং খাসির লেগ ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দোকানি আসিফ মিয়া জানান, তার দোকানে আস্ত মুরগির রোস্ট, কোয়েল পাখি, চিকেন ফ্রাই আছে। বড় আস্ত মুরগির রোস্ট ৪২০ টাকা আর ছোট আস্ত মুরগির রোস্ট ৩৬০ টাকা। কোয়েল পাখি ৮০ টাকা, চিকেন ফ্রাই ১৬০ টাকা, চিকেন চিক ৪০ টাকা, মুরগির রান ৬০ টাকা, মুরগির জালি কাবাব বড়-ছোট ভেদে ৪০ টাকা ও ৩০ টাকা, মুরগির গ্রিল ১৫০ টাকা, চিকেন তন্দুরি ১৫০ টাকা ও চিকেন টিকিয়া ১৩০ টাকা।

ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার ইফতার পণ্যের দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এমনিতে মানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থা তার ওপর দাম বাড়ানোতে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এ বছর পণ্যের দাম বেড়েছে অনেকগুণ।

ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় গরু ও খাসির মাংসের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মুরগি ও অন্যান্য ইফতারির উপাদান ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সে তুলনায় আমরা তেমন দাম বাড়াইনি।

এবার রমজানে চকবাজারসহ রাজধানীর প্রায় সব ইফতারির বাজারে মাসব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। চকবাজার শাহি মসজিদ রোডের শুরুতে বাম পাশে বসানো হয়েছে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের মনিটরিং বুথ। রোজার প্রথম দিন থেকে চকবাজারে অভিযান চালিয়ে আসছেন তারা।

অভিযানে আসা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মনিটরিং কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, রমজানের শুরু থেকে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। মাসব্যাপী অভিযান চলবে। এখন পর্যন্ত কোনো জরিমানা করা হয়নি। নির্দেশনাগুলো মানার জন্য আমরা বারবার সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

এদিকে বেইলি রোড নতুন প্রজন্মের কাছে ফাস্টফুড খাবারের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এসব ফাস্টফুডের দোকানগুলো রোজায় ইফতারের বিশেষ আইটেম নিয়ে ক্রেতাদের সামনে হাজির হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেইলি রোডে ইফতার পণ্যের বিক্রি ভালো জমছে না। বিশেষ করে গোশতের আইটেমগুলোর দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।

বেইলি রোডের ইফতার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাংসের তৈরি ইফতারসামগ্রীর মধ্যে খাসির লেগ রোস্ট, চিকেন রোস্ট (আস্ত), চিকেন ফ্রাই, মগজ ভুনা, খাসির গ্রিল চাপ, গরুর চাপ খুব জনপ্রিয়। নবাবী ভোজে দেখা গেছে, চিকেন ঝাল ফ্রাই কেজি ১৪০০ টাকা, বিফ ভুনা হাড় ছাড়া ১৬০০ টাকা, মাটন ভুনা ১৮০০ টাকা, চিকেন রোস্টপিস ১৮৫ টাকা, আস্ত মুরগির রোস্ট ৬৫০ টাকা, মাটন লেগ রোস্টপিস ৬০০ টাকা, গরুর তেহারি ২৮৫ টাকা, মোরগ পোলাও হাফ ২৮০ টাকা, স্পেশাল কাচ্চি বিরিয়ানি ৩০০ টাকা, চিকেন গ্রিল কোয়ার্টার ১৫০ টাকা, হাফ ২৮০ টাকা এবং ফুল ৫২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

নবাবী ভোজের ম্যানেজার সরোয়ার জানান, গত বছর চিকেন ঝাল ফ্রাই ছিল ১২০০ টাকা এবার ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। একইভাবে বিফ ও মাটনের দামও ২০০ টাকা করে বেড়েছে। তবে এ দাম ইফতার উপলক্ষ্যে বাড়ানো হয়নি।

ইফতার কিনে বাসায় ফেরার সময় কাজী জেবেল নামের এক ক্রেতা বলেন, বেইলি রোডের ইফতারের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। এখানকার ইফতারের মান বেশ ভালো তাই ইফতার কিনতে এলাম। তবে এ বছর মাংসের তৈরি প্রায় সব ইফতারের দামই বেশি।

ধানমন্ডি স্টার হোটেল অ্যান্ড কাবাবের ইফতারসামগ্রীর মধ্যে মাংসের আইটেম পনির রেজালা হাফ ১৭০ টাকা, খাসির গ্রিল চাপ প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, খাসির লেগ কাবাব প্রতিপিস ৬০০ টাকা, খাসির লেগ রোস্ট প্রতিপিস ৬০০ টাকা, চিকেন ফুল রোস্ট বড় প্রতিপিস ৪০০ টাকা, চিকেন ফুল রোস্ট ছোট প্রতিপিস ৩০০ টাকা, চিকেন ঝাল ফ্রাই প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা, চিকেন ড্রাম স্টিক প্রতিপিস ৬৫ টাকা, চিকেন ফ্রাই প্রতিপিস ৭৫ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি।

ইফতারের আইটেম হিসাবে এবার মাংসের আইটেমগুলোর চাহিদা অন্যবারের তুলনায় একটু কম। টাউন হল ছাড়াও মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ার, তাজমহল রোড, সলিমুল্লাহ রোড এবং শ্যামলীসহ বেশ কয়েক জায়গায় বাহারি ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম