Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন

ঢাকায় ফ্ল্যাট পেয়ে বস্তিবাসীর মুখে ফুটেছে হাসি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইয়াসমিন তার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে বস্তিতে দুই দশকের বেশি সময়ে কাটিয়েছেন। চারপাশের পরিবেশ ছিল নোংরা। সেখানে অদ্ভুত গন্ধ ছিল নিত্যসঙ্গী। বস্তিতে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ থাকত না। অন্য সময় আর্দ্র পরিবেশের কারণে ঠিকমতো হাঁটাও সম্ভব হতো না। বৃষ্টি হলে সমস্যা আরও বাড়ত। ঘর থেকে বের হওয়া যেত না। ইয়াসমিন এখন আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত বহুতল ভবনের বাসিন্দা। শেখ হাসিনার সরকারের বস্তিবাসীদের জন্য নির্মিত একটি ভবনে তিনি উঠেছেন।

ইয়াসমিনের পরিবারকে একটি ভবনে একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইয়াসমিনের মতো এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বস্তিবাসীকে এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ইয়াসমিন বলেন, আগে ৩০ জন মিলে একটি বাথরুম ব্যবহার করতাম। এক ঘরে কেউ একটি টুলের ওপর, কেউ মাটিতে ঘুমাতাম। সেখানে বসবাসযোগ্য পরিবেশ ছিল না, এখন তারা আলাদা ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন। একটি আলাদা বাথরুম ও বারান্দা আছে। বিদ্যুৎ না থাকলেও জেনারেটর সুবিধা পাওয়া যায়। একটি লিফট আছে। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে, আমি এমন একটি বিল্ডিংয়ে থাকতে পারব, তিনি যোগ করেন।

ইয়াসমিন বলেন, আমি আমার সন্তানদের ভালো পরিবেশে রাখতে পেরেছি। বাবা-মা হিসাবে আমরা আর কী চাই? আসবাবপত্র কিনে ঘর সাজিয়েছি। সবকিছু এখন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

ইয়াসমিনের মা রেহানাকেও ওই ভবনে একটি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে। রেহানা বলেন, আমি কল্পনাও করিনি যে, আমি এমন পরিবেশে থাকব। আমার সন্তানদের এমন সুন্দর পরিবেশে রাখতে পারা স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বস্তিবাসীদের এই সুযোগ করে দিয়েছেন। ইন্ডিয়া টুডে।

তবে সরকার বস্তিবাসীদের জন্য নির্মিত এসব ফ্ল্যাট বিনামূল্যে বরাদ্দ দেয়নি। এর মধ্যে কিছু পরিবার মাসিক ভাড়া দিয়ে থাকেন। বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাটের প্রকল্পটি ২০২১ সালের ৩ আগস্ট উদ্বোধন ও হস্তান্তর করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন।

ঢাকার বস্তিবাসীদের জন্য এই ভবনগুলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের এক অনন্য উদাহরণ।

বাংলাদেশ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। সারা দেশে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য সত্ত্বেও সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কাজ করছে। যা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পক্ষে।

দেশটি গৃহহীনদের বাসস্থান ও দরিদ্রদের জন্য খাদ্য নিশ্চয়তায় কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যাতে কেউ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বাইরে না থাকে। বস্তিতে বসবাসকারী ৩০০টি নিম্নআয়ের পরিবারকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্মিত ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়েছেন।

বস্তিবাসীদের উন্নত আবাসনের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ঢাকার মিরপুর ১১ নম্বরে প্রকল্পটি সম্পন্ন করেছে।

এ ধরনের দুটি ভবন বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব ভবনে ডিসেম্বর থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হবে। ১৪৮ কোটি টাকায় প্রায় ১০,০০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে আরও এক হাজার পরিবারকে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। বস্তিবাসীদের এই উদ্যোগ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাবে।

সরকার সব নাগরিককে আবাসন নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনেকবার বলেছেন, তার স্বপ্ন হলো দেশকে এমনভাবে গঠন করা, যেখানে কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকেরই যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ থাকবে।

এছাড়া সরকার গৃহহীনদের ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের আওতায় পাকা ঘর বরাদ্দ দিয়েছে। সুবিধাভোগীদের জন্য দুই শতক জমি, বিনামূল্যে বিদ্যুৎসহ দুই কক্ষের বাড়ি, একটি রান্নাঘর ও একটি বাথরুম বরাদ্দ দিয়েছে। বাড়িটি স্বামী-স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে প্রতি দশটি পরিবারের জন্য একটি করে নলকূপ রয়েছে।

তাদের চিকিৎসার প্রয়োজনে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটি বিশ্বের প্রথম ও বৃহত্তম প্রকল্প। যেটা তাদের মূলধারার মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

প্রকল্পের প্রথম দুই ধাপে এ পর্যন্ত গৃহহীনদের জন্য ১,৮৩,০০৩টি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। সিংহভাগই ২০২১-২২ সালে মুজিববর্ষ উপহার হিসাবে দেওয়া হয়েছে। আরও ৬৫,৬৭৪টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো দ্রুত হস্তান্তর করা হবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পটি তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। এটি শেষ হওয়ার সময় বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম