Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

চাঁদা না দেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার নার্সারিতে জাবি ছাত্রলীগের তালা

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চাঁদা না দেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার নার্সারিতে জাবি ছাত্রলীগের তালা

সাভারে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। তাদের দাবি করা চাঁদার টাকা না দেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার নার্সারিতে ছাত্রলীগের ওই নেতারা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
চাঁদা দাবি করা ছাত্রলীগ নেতারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, শাহ পরান, মো. হাসান মাহমুদ ফরিদ ও আবদুল্লাহ আল ফারুক ইমরান। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহ আলম তালুকদারের বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ায়। তবে তিনি থাকেন সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায়। শাহ আলম তালুকদার যুদ্ধের পরেই সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন একটি নার্সারি পরিচালনা করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহ আলম তালুকদারের কাছে প্রথমে ছাত্রলীগের নেতারা এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। তিনি টাকা না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে টাকা দিতে অক্ষমতার কথা জানান। তবে সভাপতির সঙ্গে দেখা করার পরেই নার্সারিতে এসে তাকে তারা নানা হুমকি দেন। 
ছাত্রলীগ সভাপতিকে জানানোর কারণে এবার তারা টাকার অঙ্ক দ্বিগুণ করে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। এছাড়া প্রতি মাসে ছাত্রলীগকে ১০ হাজার টাকা করে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে বলেও জানান। টাকা দিতে না পারলে তারা নার্সারিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ৯ মার্চ দুপুরে আবারও ওই ছাত্রলীগ নেতারা নার্সারিতে আসেন এবং তাৎক্ষণিক ৮০ হাজার টাকা দিতে বলেন। এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা নার্সারিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে যান।
শাহ আলম তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, টাকা দিতে না পারায় ওরা আমার নার্সারিতে তালা ঝুলিয়ে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে আমার নার্সারি বন্ধ। কী করব? কার কাছে যাব আমি বুঝতেছি না। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি, তারপর সমস্যা আরও বাড়ছে।
তিনি বলেন, যেই দেশের জন্য যুদ্ধ করলাম, দেশ স্বাধীন করলাম, সেই দেশে চাঁদা দিয়ে থাকতে হবে? প্রয়োজনে দেশ ছেড়ে চলে যাব, আগুন দিয়ে নার্সারি পুড়িয়ে ফেলব কিন্তু চাঁদা দিতে পারব না।
এদিকে যুগান্তরের অনুসন্ধানের খবর পেয়ে শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে পাঁচ ছাত্রলীগ নেতা এসে নার্সারির তালা খুলে দেন। এছাড়া দুপুর ২টার মধ্যে নার্সারির পরিচালককে তারা দেখা করতে বলেন। 
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, নার্সারির মূল মালিক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা নূরুল আমিন। তার কাছ থেকে নার্সারি পরিচালনার দায়িত্ব নেন শাহ আলম তালুকদার। কিন্তু শাহ আলম তালুকদার নুরুল আমিনকে ভাড়ার টাকা দেন না। পরে নূরুল আমিন কাকা আমাদের ছাত্রলীগকে টাকাটা আদায় করে দিতে বলেছেন। আমরা বকেয়া টাকা পরিশোধ করার কথা বলেছি। কিন্তু কোনো চাঁদা দাবি করিনি। তবে নূরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, আমি ছাত্রলীগের নেতাদের কেন টাকা আদায় করে দিতে বলব? ছাত্রলীগের দুজন আরও আমার কাছে এসে নানা চাপ প্রয়োগ করছে। তারা বলেছে আমি যেন নার্সারির লিজ অন্যের নামে লিখে দেই।
এদিকে নূরুল আমিনের সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল ফারুক ইমরানের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেই রেকর্ড থেকে জানা যায়, নার্সারির বর্তমান পরিচালক শাহ আলম তালুকদার বকেয়া পরিশোধ না করায় নূরুল আমিন ছাত্রলীগের নেতাদের তার বকেয়া টাকা তুলে দেওয়ার জন্য বলেছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল যুগান্তরকে বলেন, লোকটি আমার কাছে আসছিল। কিন্তু আমি যতদূর জানি ওই নার্সারির জায়গাটা বরাদ্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার নামে। ওই ব্যক্তি নিয়মিত ভাড়া দেন না। এ বিষয়টা ছাত্রলীগের ওদের তিনি জানিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতারা নার্সারিতে তালা দিতে পারেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ছাত্রলীগ তালা ঝুলিয়ে দিতে পারে না। তবে বিষয়টা যেহেতু ক্যাম্পাসের সাবেক কর্মকর্তার, সেই হিসাবে বড় ভাইয়ের জন্য তারা হয়তো এটা করেছে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপারে এ ধরনের অভিযোগ এলে তা শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।
 

 

তালা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম