Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

বান্দরবান পাসপোর্ট অফিস যেন ঘুসের বাণিজ্যালয়

Icon

মোহাম্মদ ইলিয়াছ, বান্দরবান (দক্ষিণ)

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বান্দরবান পাসপোর্ট অফিস যেন ঘুসের বাণিজ্যালয়

বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যেন ঘুস আর দালালদের বাণিজ্যালয় হয়ে উঠেছে। ঘুস এবং দালাল ছাড়া কোনোভাবেই পাসপোর্টের আবেদন জমা দেওয়া যায় না। ঘুসের টাকা কম দেওয়া হলে নানা অজুহাতে আবেদনপত্রের ফাইল ফেরত দেওয়া হয়। এমনকি টাকা কম দিলে অনলাইনে আবেদন করার সময় কোনো জায়গায় ভুল করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেকের আবেদন ফরমের পেছনের পাতায় দালালদের একটি স্বাক্ষর থাকে আর ওই স্বাক্ষর দেখেই ফাইলগুলো জমা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার নিচে কোনো পাসপোর্টের আবেদনে হাত দেন না এ পাসপোর্ট অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। কাগজপত্রে কোনো সমস্যা থাকলে তো কথাই নেই। ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ যত টাকা নেওয়া যায়। এভাবেই চলে আসছে তাদের খোলামেলা ঘুসবাণিজ্য।

পেকুয়া উপজেলার মহিউদ্দিন জানান, আমি দশ বছরের নতুন পাসপোর্ট করেছি। আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়েছে পাসপোর্ট অফিস।

লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের আলমগীর চৌধুরী বলেন, আমার বন্ধুর পাসপোর্টের আবেদন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু যেখানে সরকারিভাবে নেওয়ার কথা ৫ হাজার ৭৫০ পঞ্চাশ টাকা সেখানে নিয়েছে ১০ হাজার টাকা। আমি প্রতিবাদ করলে উল্টো হয়রানিমূলক কথাবার্তা বলেছে।

ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করতে রামু থেকে এসেছেন মোরশেদ আলম। তিনি বলেন, পাসপোর্ট ৫ বছরের হোক বা ১০ বছরের-অফিসে সরকারি ফিয়ের বাইরে নাকি ৫ হাজার টাকা বেশি দিতে হবে।

বিষয়টি তদন্ত করতে গেলে এ প্রতিবেদকের হাতে আসে বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এ অফিসের কর্মচারী আরকান পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য একজনের কাছে ১১ হাজার টাকা দাবি করছেন। অন্য ভিডিওতে দেখা যায় দিদার নামের আরেক কর্মচারী পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার সময় টাকা চাইছেন। মূলত পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার সময়ও কর্মচারীদের টাকা দিতে হয়।

প্রতিবেদকের পরিচয় গোপন রেখে এ পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী সজিবকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিদিনের আবেদনের টাকাগুলো দিন শেষে রইসুল ইসলাম নামের অফিস সহকারীকে বুঝিয়ে দিতে হয়। যদিও তিনি বিষয়টা অস্বীকার করেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সূত্রে আবেদনকারী সেজে এ প্রতিবেদক কথা বলেন পাসপোর্ট অফিসের সুমন নামক এক দালালের সঙ্গে। পাসপোর্টের আবেদন করতে কত টাকা লাগবে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ১২ হাজার টাকার কথা বলেন। এর মধ্যেই অফিস ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাবে এবং পুলিশ ভ্যারিফিকেশন আবেদনকারীকেই করতে হবে বলেও জানান তিনি। কাগজপত্রে কোনো ত্রুটি থাকলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকাও লাগতে পারে বলে জানান এ দালাল।

বান্দরবান পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক শওকত কামাল বলেন, এরকম টাকা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই এবং দালালদেরও কোনো স্থান দেওয়া হয় না এ অফিসে। যদি এরকম হয়ে থাকে আমাদেরকে তথ্য দিন। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

বান্দরবান

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম