পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে নিয়োগ
ফের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিলেন ডিসি
মিজানুর রহমান, ঝিনাইদহ
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগ নিয়ে ফের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আরিফুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী ২৯ মে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। দপ্তরটির সদ্য স্ট্যান্ড রিলিজ (ঠাকুরগাঁও জেলা) হওয়া ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এসএম আল কামাল, একই দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহা. মোজাম্মেল করিম, তত্ত্বাবধায়ক মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র গাইনকে শুনানিতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ খবর নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এসএম আল কামালকে ২১ মে ঠাকুরগাঁও জেলায় স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার উপপরিচালক এবিএম শরিফুল ইসলামকে সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
দুর্নীতিবাজ চক্রের প্রধান স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (বর্তমানে অবসরে) ডা. জাহিদ আহমেদের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত দপ্তটির সহকারী পরিচালক মোহা. মোজাম্মেল করিম। অভিযোগ রয়েছে চাকরি বাণিজ্যের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আগে থেকে মাঠে ছিলেন তিনি। এবার নিজেই ফেঁসে গেছেন। তদন্ত কমিটি তাকেও তলব করেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন এই কর্মকর্তা। নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। কথা বলতে গিয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী আঞ্জুয়ারা যুগান্তরকে বলেন, এসব পাপ থেকে কবে আমরা মুক্তি পাব আল্লাহপাকই ভালো জানেন।
উল্লেখ্য, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ঝিনাইদহের রাজস্ব খাতভুক্ত ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির শূন্যপদ পূরণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ৭ জন, পরিবার কল্যাণ সহকারী (শুধু মহিলা) পদে ৬৭ জন এবং আয়া ৮টি পদে জনবল নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন আহবান করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৮২টি পদের বিপরীতে তিন হাজার ৭৪২ জন আবেদন করেন। ২০২২ সালের ১৪ জুলাই প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ২৩ জন, পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ২৩৬ এবং আয়া পদে ৩০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বছরের ৭ নভেম্বর তাদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে বলে ভাইভা কার্ড দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ৪ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তরে ‘জনবল নিয়োগে ঘাপলা নেপথ্যে অর্থ বাণিজ্য’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর নিয়োগের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন সে সময়কার জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে। জেলা প্রশাসন থেকেও তদন্ত কমিটি করা হয়। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চাকরি বাণিজ্যের ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে স্থগিত হওয়া মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে গত ১৯, ২০ ও ২১ মে আবার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রথীন্দ নাথ রায় জানান, লিখিত পরীক্ষা ও সংশোধিত মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন করে তদন্তের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে ফোনে জানান।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুনঃমৌখিক পরীক্ষায় ৪৬৪ জনকে ভাইভা বোর্ডে ডাকা হয়। আগের ফলাফলে (২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর) মৌখিক পরীক্ষায় ২৮৯ জনকে পত্র দেওয়া হয়। এবার সংশোধিত তালিকা অনুযায়ী আরও ১৭৫ জন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের শুধু রোল নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। অজ্ঞাত কারণে নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি। এর ফলে নতুন করে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আজ ২৭ মের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা রয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানায়। তবে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) পর্যন্ত নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়নি।
