প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
আমিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছচারিতার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কমিটি প্রকল্প পরিচালককে দায়ী করে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়, প্রকল্পের জন্য কেনা যন্ত্রপাতি বুঝে পাওয়ার আগেই ২৩ কোটি টাকার বিল ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হয়, যা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম। সংস্থার চলমান পানির গুণগতমান পরীক্ষা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের দরপত্র কার্যক্রম বিধি মোতাবেক হচ্ছে কি না, কমিটি গঠন করে পর্যায়ক্রমে তা যাচাই করতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সংস্থাটির সব প্রকল্পের কার্যক্রমের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের মনিটরিং আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে। এছাড়া পিপিআর-২০০৮ আলোকে দরপত্র খোলা এবং দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি করে পুনর্মূল্যায়ন করতে বলেছে তদন্ত কমিটি। সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের জুন থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত চার বছর মেয়াদে জেলায় জেলায় পানির গুণগতমান পরীক্ষা শক্তিশালীকরণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর মধ্যে দেশের বেশকিছু জেলায় পানির গুণগতমান পরীক্ষা শক্তিশালীকরণ ল্যাব স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে এবং অনেক জেলায় কাজ চলমান। জেলায় জেলায় পরীক্ষাগারে পানির গুণগতমান পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কম্পিউটারসামগ্রী ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে সংস্থাটি।
দরপত্রের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল এবং অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে একই বছর ৩ এপ্রিল পানির মান যাচাইয়ের যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। একটি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় এবং অপর প্রতিষ্ঠানটিকে ১৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ টাকায় কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যাচাই করে দেখা গেছে গত বছর জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উল্লিখিত সময়ের মধ্যে মালামাল গ্রহণ করেন।
কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটিকে রানিং বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২০২২ সালের ২০ জুন। এক ঠিকাদারকে ১৩ কোটি এবং আরেক ঠিকাদারকে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়। অর্থাৎ মালামাল বুঝে পাওয়ার এক মাস আগেই বড় অঙ্কের টাকা পরিশোধ করা হয়, যা পাবলিক রেগুলেশন বিধিমালা-২০০৮-এর ৫৬ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তদন্ত কমিটি বিষয়টিকে গুরুতর অপরাধ বলে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বলেছে। ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা রানিং বিল নেওয়া প্রতিষ্ঠান মিডিয়া গ্রাফিক্স ট্রেডিং লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. আব্দুস সাত্তার যুগান্তরকে বলেন, আমরা চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ সরবরাহ করে বিল নিয়েছি। আরও দুই কোটি টাকা বিল পাব এবং সরকারও আমাদের কাছে কিছু যন্ত্রপাতি পাবে। আমরা কোনো অনিয়ম করিনি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সারোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দরপত্রে অনিয়মের ঘটনাটি আমিও শুনেছি। আগের দরপত্র বাতিল করা হয়েছে এবং পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। প্রকল্পের মালামাল বুঝে না নিয়ে বিল পরিশোধ করার বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, শুনেছি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি। রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা বলতে পারব কতটা অনিয়ম হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. হাচানুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সঠিক না। যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ বুঝে পাওয়ার পর বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। দরপত্রে অনিয়মের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জানান, দরপত্রের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে আমরা প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে অনুমোদনের জন্য পাঠাই। সেখান থেকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগের (পরিকল্পনা অধিশাখা-১) যুগ্মসচিব এএইচএম কামরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, আমরা কাগজপত্রে যা দেখেছি, তার আলোকে প্রতিবেদন দিয়েছি। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
