ব্রিটিশ নাগরিকের অভিযোগ
রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের নামে আনা ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ
২০টির বেশি সংগঠন জড়িত মামলা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাভারের রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম ভাঙিয়ে গত ১০ বছরে তিনটি সংগঠন প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা ‘লাভদেশ’-এর সিইও এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ইয়াসমিন চৌধুরী হ্যাপি এই অভিযোগ করেছেন। রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
হ্যাপি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত তিনটি সংগঠন ১০ বছরে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের নাম করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা এনেছে। কিন্তু তারা ক্ষতিগ্রস্ত কাউকে কোনো সাহায্য করেনি। তার ভাষ্যমতে, প্রতিষ্ঠানগুলো হলো আওয়াজ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ফ্যাশন রেভুলেশন-ইউকে এবং ফেয়ার ওয়ার ফাউন্ডেশন। তাদের নামে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
ইয়াসমিন চৌধুরী হ্যাপি বলেন, আমরা চাই শ্রমিকদের সহায়তার নাম করে বিদেশ থেকে টাকা এনে যা আত্মসাৎ করা হয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিলি করা হোক। শুধু তিন সংগঠন নয়, আরও ২০টির বেশি সংগঠন এমন কাজ করেছে বলে আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। মামলা হওয়ার পর থেকে তারা বিভিন্নভাবে সাক্ষীদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এসব হুমকি-ধমকিতে ভয় পাই না। আমরা সময়মতো সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রয়োজনে বাংলাদেশ নয়, লন্ডন আদালতেও আমরা মামলা করব।
সংগঠনগুলো রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার নামে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম করেছে। পরে তারা ফান্ড এনে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ বিষয়ে যখন তাদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, তখন তারা আমাকে ব্লক দিয়েছে। শুধু তাই নয়, হৃদয় নামে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত এক শ্রমিক তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে তারা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং তাকে হত্যার চেষ্টা করেন।
তিনি আরও জানান, রানা প্লাজার সাবেক পোশাককর্মী মরিয়ম আক্তার সঞ্চিতা ১৩ বছর ধরে তার বোন শ্যামলীকে খুঁজছেন। ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি ফ্যাশন সংস্থা ও বিদেশে অন্যরা কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তার পরিবার একটি টাকাও পায়নি।
এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ নাগরিক বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির অসহায় মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদ এবং এর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আপনাদের শরণাপন্ন হয়েছি।
আপনাদের সহযোগিতায় আমরা প্রতারিত মানুষের ন্যায্য পাওনা ফেরত দিতে চাই।
অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী মো. জাকারিয়া জানান, বাংলাদেশের দরিদ্র-অসহায় কিছু মানুষের পক্ষে ইয়াসমিন চৌধুরী মামলা করেছেন। যে কোনো উপায়ে আমরা দোষীদের চিহ্নিত করতে চাই।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মার্জিনা আমিন চৌধুরী (ডায়না)। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করতে চাই-আমাদের ক্লায়েন্ট ইয়াসমিন চৌধুরীর অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার বা কোনো কারখানার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তার অভিযোগ রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে। মামলার বাদী ইয়াসমিন চৌধুরী ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এ বিষয়টি অবগত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ‘নিউ ওয়েভ স্টাইল’-এর মাকসুদা ছাড়াও রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক মরিয়ম আক্তার সঞ্চিতা, মাহমুদুল হাসান হৃদয় এবং আহত শ্রমিক ইয়ানুর উপস্থিত ছিলেন।
