জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর জয়ের ছোট ভাইয়ের
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মারধরের পর ছাত্রলীগ নেতার শরীরে মদ ঢেলে মাদকাসক্ত হিসাবে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। আর পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে এ ঘটনা কাউকে না বলতে বলা হয়।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতনের বর্ণনা দেন ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ হাসান ইমন। তিনি শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী। ইমন শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
যাদের বিরদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেনÑ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী আরমান খান যুব, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের আরাফাত, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের তুষণ ও অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তি। এদের মধ্যে আরমান খান যুব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের আপন ছোট ভাই। কয়েক বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হলেও তিনি মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষ দখল করে রেখেছেন। জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনার জেরে ১৩ আগস্ট সাভারের রেডিও কলোনির বউবাজার এলাকার ভাড়া বাসার মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হয় ইমনের। ওই ঘটনার জেরে ইমনকে ফোন দিয়ে আরমান খান যুবর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন বাড়ির মালিকের পূর্ব পরিচিত আরাফাত। তার পরিপ্রেক্ষিতে যুবর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, ইমনকে মওলানা ভাসানী হলের সামনে যেতে বলেন তিনি। রাত ১২টার দিকে ইমন সেখানে গেলে যুব তাকে ১২৬ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন। এরপর কক্ষে ঢুকতেই ঘুসি মেরে ইমনের নাক ফাটিয়ে দেন যুব। সঙ্গে সঙ্গে ইমনের মুখ বেঁধে দেন আরাফাত। পরে যুব ও আরাফাতসহ সেখানে উপস্থিত অন্যরা ইমনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। ইমন কাকুতি-মিনতি করেও প্রতিকার পাননি। তাকে একদফা মারধরের পর আবার নির্যাতন শুরু করেন তারা। এছাড়া ইমনের শরীরে মদ ঢেলে উলাস করতে থাকেন যুব ও তার সহযোগীরা।
এরপর রাত ৩টার দিকে ইমনকে হলের দ্বিতীয় তলার ২২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে গালাগালি করেছেন মর্মে ইমনের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়। বিষয়টি ভিডিও ধারণ করেও রাখেন তুষণ। এরপর তাকে ফের ১২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মারধরের ঘটনা কাউকে না জানাতে ইমনের পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর আকতারুজ্জামান সোহেল ওই কক্ষে গিয়ে ইমনকে বাইরে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও ইমনকে আশ্বাস দেন। বিষয়টি আল নাহিয়ান খান জয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের জানিয়েছেন ইমন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আরমান খান যুব ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। কিন্তু তারা রিসিভ করেননি।
মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েম বলেন, ‘হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা থাকে, সে বিষয়টি আমি জানি। আমি এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে মারধরের ঘটনা জানি না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, প্রভোস্ট যদি অনুমতি না দেয় তাহলে হলের ভেতরে কোনো অভিযান চালানোর ক্ষমতা প্রক্টরের নেই। প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।
