রাজধানীর হাজারীবাগে জমি অধিগ্রহণ
রাজউকের কাছে তথ্য চেয়েছেন মেয়র
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর হাজারীবাগে পরিত্যক্ত ট্যানারি জোনের বাইরে কয়েক লাখ বাসিন্দার আবাসিক এলাকা (গজমহল-শিকারিটোলা ও বিরবন্ধ কাছড়া) অধিগ্রহণের সব ধরনের তথ্য চেয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বৃহস্পতিবার মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যানের কাছে তথ্য চান। পাশাপাশি অধিগ্রহণের কার্যক্রম সম্পর্কে তাকে অবহিত করতে বলেছেন।
এর আগে গজমহল-শিকারিটোলা ও বিরবন্ধ কাছড়া আবাসিক এলাকাকে অধিগ্রহণ থেকে রক্ষাসহ চার দফা দাবিতে মেয়রের হাতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি দেন ‘গজমহল শিকারিটোলা অধিগ্রহণ থেকে রক্ষায় মালিক ঐক্য পরিষদ’ এর সভাপতি রাহয়ান চৌধুরী ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ ওয়াদুদ আলী (দিপু)। এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্যদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মানিক হোসেন মিলু, সম্মন আহমেদ, আমজাদ সর্দার, দিল মোহাম্মদ, জানে আলম, মো. হাজী আরিফ, রাজীব আরিফিন মিথিল, শফিক সর্দার, শ্যামল লাল মদক, মতিউর রহমান মতি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস যুগান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয়রা রাজউক কর্তৃক হাজারীবাগে অধিগ্রহণ কার্যক্রমের ব্যাপারে আমাকে জানিয়েছেন। এ কারণে এখন পর্যন্ত রাজউক হাজারীবাগে অধিগ্রহণসংক্রান্ত কি ধরনের কার্যক্রম নিয়েছে সেটি অবহিত করতে বলেছি।’ স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা রাজউকের অধিগ্রহণের জন্য বসতভিটা ও বাড়ি দেব না। প্রয়োজনে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়নের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন করা হোক। আমাদের আবাসিক এলাকা আমরাই উন্নয়ন করব এবং আমরা রাজউকের অধিগ্রহণ চাই না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কতিপয় ট্যানারি মালিক নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজউকের সঙ্গে আঁতাত করে গজমহল-শিকারিটোলা ও বিরবন্ধ কাছড়া এলাকার লক্ষ্যাধিক লোকের বহুতল ভবন, ফ্ল্যাট, পাকাবাড়ি, ইমারতকে বস্তি হিসাবে উপস্থাপন করে উচ্ছেদ ও ভূমি অধিগ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। রাজউক সেই পরামর্শে ব্যবসা করতে ভিটাবাড়ি থেকে মালিকদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এটি ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অবহিত করা হয়নি। জানা যায়, ‘ঢাকা আরবান জি-জেনারেশন’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ওইসব এলাকা অধিগ্রহণ করবে রাজউক। এরপর ওই জমিতে প্লট তৈরি করে বিক্রি করবে। ২০২৪ সালে কাজ শুরু হবে বলে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম মিডিয়াকে জানিয়েছেন। এর মধ্যে ২৭ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ‘ঢাকা আরবান রিজেনারেশন প্রকল্প’ শীর্ষক হাজারীবাগ এলাকাটিকে পুনরোন্নয়ন করতে অনুশাসন জারি করে। একই সঙ্গে ট্যানারি এলাকাটি পুনরোন্নয়নের নিমিত্ত নতুন প্রকল্প নিতে বলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে স্থানীয়রা ফুঁসে উঠছে। স্মারকলিপিতে এই উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছেন, সেখানে খোদ রাজধানীতে গৃহহীন করার পাঁয়তারা করছে রাজউক। রাজউকের এই সিদ্ধান্ত মেয়রের নির্বাচনীয় প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। স্থানীয় সংসদ-সদস্য হিসাবে নির্বাচনের সময় তিনি ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা-এ পাঁচ শিরোনামের রূপরেখা দিয়েছেন। আগামী ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে এসব রূপরেখা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। ইশতেহারের পাঁচ রূপরেখায় যেসব বিষয় স্থান পেয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রাখা। কিন্তু রাজউক যে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সেটি পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যকে নষ্ট করে দেবে।
