Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

দাম বাড়ায় খাওয়ার জন্য বিক্রি

আলুবীজ সংকটের শঙ্কা উত্তরাঞ্চলে

Icon

আনু মোস্তফা, রাজশাহী

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাজারে আলুর দাম চড়া থাকায় মজুতদাররা বেশি লাভের আশায় বীজ আলুই খাবার আলু হিসাবে বিক্রি করতে হিমাগার থেকে বাজারে ছাড়ছেন। আর আলু আবাদের মৌসুম শুরু হওয়ায় রাজশাহীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর চাষিরা পড়ছেন বীজ আলু সংকটে। গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তরের মাঠে মাঠে জমি তৈরি করতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই উঁচু জমিতে বীজ রোপণ করতে শুরু করেছেন। তবে বীজ সংকটে অনেক চাষি চলতি মৌসুমে আলু আবাদ করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও বড় শঙ্কায় আছেন।

জানা গেছে, বিএডিসি থেকে উত্তরাঞ্চলের আলু প্রধান জেলাগুলোতে সরকারিভাবে যে পরিমাণ আলু বীজ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বিএডিসির বিভাগীয় বীজ বিপণন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোটা উত্তরাঞ্চলজুড়ে মাত্র ১২৫ টন বীজ আলু বরাদ্দ হয়েছে। এ বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য। সরকারি বীজ ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি হওয়ার কারণে কম মূল্যের সরকারি বীজ পাবেন না বলে অনেক কৃষক মনে করছেন।

এদিকে বীজ আলু সংকটের মধ্যে চাষিরা ঝুঁকছেন বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানির অনির্ভরযোগ্য ও অপ্রত্যায়িত আলু বীজের দিকে। বাণিজ্যিক কোম্পানির আলু বীজের দামও অনেক বেশি। তাই, কৃষকেরা বাধ্য হয়েই বিভিন্ন কোম্পানির বীজের অর্ডার দিচ্ছেন। কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে আলু আবাদে খরচ গত বছরের তুলনায় দেড়-দুইগুণ বেশি হবে। বেশি খরচ করে আলু উৎপাদনের পর বাজারে উপযুক্ত দাম না পেলে তারা পড়বেন বিপাকে। রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর জেলায় সর্বাধিক আলু উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে আলুর বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকেরা বেশি পরিমাণ জমিতে আলু আবাদের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় হেক্টর প্রতি ২৭ টন ফলন হিসাবে ৯৮ লাখ ৫৫ হাজার টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জানা গেছে, নভেম্বর থেকেই রাজশাহীসহ উত্তরের কৃষকেরা আলু আবাদের জোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন। মাঠে মাঠে চলছে জমি তৈরির কাজ। কৃষি বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক আলু আবাদ চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অনেক চাষি আমন ধান কেটে সেই জমিতে আলু আবাদ করবেন। যেসব জমির আমন এখনই পেকে গেছে কৃষকরা দ্রুত ধান কেটে তুলে ওইসব জমিতে আলু আবাদের জন্য জমি তৈরিতে হাত দিয়েছেন। সার ও সেচ দিয়ে জমি ভিজিয়ে আলুর জমি তৈরি হয়ে গেছে। এখন তারা তাতে বীজ রোপণ করবেন। অনেকেই বীজ আলু সংগ্রহে রাজশাহীর হিমাগারগুলোর সামনে ধরনা দিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, মজুতদাররা বীজ আলু হিমাগার থেকে বের করে খাওয়ার আলু হিসাবে বাজারে ছাড়ছেন। এর ফলে বীজ আলুর দাম কিছুটা বেড়েছে। রাজশাহীতে এক কেজি বীজ আলুর দাম উঠেছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। গত বছর তারা এক কেজি বীজ আলু কিনেছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রাজশাহীর পারিলা ইউনিয়নের হাট রামচন্দ্রপুর গ্রামের আলু চাষি এনায়েত হোসেন মোল্লাহ জানান, গত বছর আলু বীজ কিনেছি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি করে। গত বছর এক একর জমিতে ৭২০ কেজি করে আলু বীজ রোপণ করায় শুধু বীজ কিনতে খরচ হয়েছিল ২ হাজার ১৬০ টাকা। সার বীজ সেচ জমি জমি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ মিলে এক বিঘা আলু আবাদে খরচ ছিল ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। এক বিঘাতে খরচ হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এলাকাভেদে এই খরচ আরও বেশি।

কৃষক এনায়েত মোল্লাহ ছাড়াও আলু চাষি নজিরউদ্দিন শেখ ও ফজলে হোসেন বলেন, প্রতি বিঘাতে ২৪০ কেজি করে বীজ লাগে। বীজ আলুর আকার ছোট-বড় হলে এই পরিমাণে কিছুটা হেরফের হয়। কিন্তু এবারে ৭০ টাকা কেজি করে বীজ আলু কিনতে হচ্ছে। ফলে এক বিঘাতে আলু বীজ কিনতেই খরচ হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা। অন্যসব খরচ মিলিয়ে চলমি মৌসুমে বিঘাতে আলু আবাদের খরচ হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কৃষকেরা আরও জানান, বছর বছর সার ও সেচের খরচও বেড়েছে। বেড়েছে শ্রমিকের খরচ। এ বছর আলুর বাজার দাম বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক আলু আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ মঙ্গলবার বলেন, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের আলু প্রধান এলাকা রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর অঞ্চল। এসব এলাকায় আলু আবাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ভালোভাবেই। কোথাও বীজ সংকটের খবর নেই। তবে বাজারে আলুর দাম কিছুটা বেশি হলেও হিমাগারগুলোতে আলুর কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত বীজ আলু রয়েছে যা উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের আবাদ চাহিদায় সমস্যা হবে না।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম