চট্টগ্রামের ১৬ আসনে প্রার্থী হয়েছেন ১৬৩ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ২২টি রাজনৈতিক দলের ১৩২ জন। ৩১ জন স্বতন্ত্র-যারা আওয়ামী লীগের নেতা। তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে তা হবে আওয়ামী লীগের জন্য গলার কাঁটা-এমনটিই আশঙ্কা করছেন দলের নেতাকর্মীরা।

এবার জেলার ১০ আসনে ১০৩ জন এবং নগরী ও নগরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ৬ আসনে ৬০ জন প্রার্থী। দুই আসনে সরাসরি দুজন নারী প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং বন্দর-পতেঙ্গা আসনে স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ নেত্রী রেখা আলম চৌধুরী।

মনোনয়নপত্র জমাদানকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে-আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বিএনএফ, সুপ্রিম পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, গণমুক্তি সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টি, ন্যাপ, গণফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোট।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ১৬ আসনের বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আবার ৮টিতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। নেতাকর্মীদের মতে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মাঠে না থাকলেও স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহীদের মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় নৌকাকে শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতার মুখে পড়তে হবে।

চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলের সঙ্গে টেক্কা দিতে প্রার্থী হয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন। আসনটিতে তার নিজস্ব বলয় রয়েছে। তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ-সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী নাগরিক কমিটির ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ অন্যান্য নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। ১৫ বছরে তিনি পটিয়ার আনাচে-কানাচে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন। দল থেকে তার মনোনয়ন না পাওয়ার খবরে পটিয়ার সর্বত্র নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) বর্তমান এমপি ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী অওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী বা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্বাচিপ নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব। দুজনই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি। নির্বাচনটি যেন উৎসবমুখর ও অধিকসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া এই নির্বাচনটা যেন দেশ ও দেশের বাইরে একটি মাইলফলক হিসাবে বা ইতিবাচক চিহ্নিত হয়ে থাকে। ভোটাররা যাতে তার পছন্দমতো প্রার্থীকে বেছে নিতে পারেন। দলের বা নৌকা প্রতীকের সঙ্গে আমাদের কোনো সাংঘর্ষিক বক্তব্য নেই। নৌকা যাকে দেওয়া হয়েছে তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম, এখনো আছি।

চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ-সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মুজিবুর রহমান। তিনি স্মার্ট গ্র“প ও দৈনিক পূর্বদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবদুলাহ কবির লিটনও প্রার্থী হয়েছেন।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হোসাইন আবু তৈয়ব। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী (বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন)।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ-সদস্য এম আবদুল লতিফ। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৩৯ ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের মহিলা নেত্রী সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরীও এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।