Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

সাক্ষাৎকার: যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান

খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসবে

অটোমেশনের বিকল্প নেই * খরচ কমাতে হবে

Icon

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসবে

যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম

ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে পুরো খাতে ছড়িয়ে পড়েছে অনাস্থা। এর প্রভাবে কিছু ব্যাংকে তীব্র তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ মুহূর্তে আরও একটি বড় সমস্যা ডলার সংকট। তবে উল্লিখিত সব সমস্যা থেকে যমুনা ব্যাংক অনেকাংশে মুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম। তার মতে, যেখানে প্রায় এক ডজন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫ থেকে ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত, সেখানে যমুনা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ মাত্র ৩-৪ শতাংশ, যা বৈশ্বিক রীতি অনুযায়ী সহনীয়। এছাড়া ব্যাংকটিতে অনাস্থা এবং তারল্য সংকট নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ঋণ দেওয়া হয়। তবে খরচ কমাতে পুরোপরি অটোমেশনের পক্ষে মত দেন তিনি। সম্প্রতি যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যাংক ছাড়াও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন সাইদুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-হামিদ বিশ্বাস

যুগান্তর : যমুনা ব্যাংক সম্পর্কে বলুন?

সাইদুল ইসলাম : ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আমানত স্থিতি নিয়ে ২০২৪ সালের কার্যক্রম শুরু করেছে যমুনা ব্যাংক। এ সময় ঋণস্থিতি ছিল ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডি রেশিও ছিল ৭৬.৩৭ শতাংশ। বিনিয়োগ আছে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আমদানি ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। রপ্তানি ১৯ হাজার কোটি টাকা এবং পরিচালন মুনাফা ১ হাজার কোটি টাকা। সারা দেশে ১৬৭ শাখার অধীনে রয়েছে আরও ১১০টি উপশাখা। ৩৪৭টি এটিএম বুথের পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংক আউটলেট আছে ৪৮টি। পুরো সেবাটাকে শতভাগ অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

যুগান্তর : যমুনা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার কত?

সাইদুল ইসলাম : মন্দ ঋণ একেবারে নেই তা বলব না, তবে অন্য ব্যাংকের তুলনায় যমুনা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ অনেক কম। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ৪.৭১ শতাংশ; বর্তমানে ৩.৬ শতাংশ; সেটা আরও কমে তিন শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

যুগান্তর : ঋণ অবলোপনের অঙ্কটা কেমন?

সাইদুল ইসলাম : যমুনা ব্যাংকে ঋণ অবলোপন আছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। মন্দমানের এ ঋণগুলো আদায়ে মনোযোগ বাড়ানো হয়েছে। আশা করি ধীরে ধীরে টাকাগুলো ফেরত আসবে।

যুগান্তর : ঋণ পুনঃতফশিলের অঙ্ক?

সাইদুল ইসলাম : ঋণ পুনঃতফশিল থাকবেই। এ অঙ্ক বলা কঠিন। কারণ করোনার সময় ছোট বড় প্রায় সব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ওপর নেমে এসেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফলে বাস্তবিক কারণেই বিভিন্ন কোম্পানি ঋণ পুনঃতফশিল করেছে। এছাড়া বিকল্প পথও ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ঋণগুলো পুনঃতফশিল করা হয়।

যুগান্তর : অটোমেশন নিয়ে কিছু বলুন।

সাইদুল ইসলাম : এ মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খরচ কমানো। ব্যাংকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আর খরচ কমাতে হলে অটোমেশনের বিকল্প নেই। সে জন্য বড় পরিসরে অটোমেশনে যাচ্ছি। এ জন্য বড় বাজেটও রাখা হয়েছে। অটোমেশন সংক্রান্ত বেশ কিছু নতুন সিস্টেম চালু করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় জনবল কম লাগবে। খরচও কমে আসবে। তবে জনবলকে প্রশিক্ষিত করতে হবে।

যুগান্তর : জনগণের টাকার নিরাপত্তা নিয়ে কিছু বলুন?

সাইদুল ইসলাম : ব্যাংক ব্যবসার অন্যতম শর্ত হচ্ছে বিশ্বাস, আস্থা এবং নিরাপত্তা। কারণ ব্যাংক জনগণের টাকা নিয়ে ব্যবসা করে। এ জায়গায় কোনো আপস করে না যমুনা ব্যাংক। সে কারণে যমুনা ব্যাংকে জনগণের টাকা শতভাগ নিরাপদ।

যুগান্তর : কয়েকটি ব্যাংকে তীব্র তারল্য সংকট, করণীয় কী?

সাইদুল ইসলাম : যমুনা ব্যাংকে নবীন এবং প্রবীণের সমন্বয়ে একটি সুন্দর পরিচালনা পর্ষদ আছে। যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো ঋণ দেওয়া হয় না। যথাযথ নিয়ম মেনে (ডিউডিলিজেন্স) ঋণ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে ঋণ কম যাবে। কিন্তু গ্রাহককে চেনা ছাড়া (কেওয়াইসি মেনে) ঋণ দেওয়া হয় না। সে জন্য গত ২৩ বছরে একদিনেও জন্যও তারল্য সংকটে পড়িনি। একই সঙ্গে ডলার সংকটে এলসি খুলতে পারিনি এমন ঘটনাও কখনও ঘটেনি। যেসব ব্যাংকে যথাযথ নিয়মে ঋণ যায়নি কিংবা ফলো আপ ঠিকমতো হয়নি সেসব ব্যাংকে সমস্যা হচ্ছে।

যুগান্তর : পরিপূর্ণভাবে শরিয়াহ ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরের কোনো ইচ্ছা আছে নাকি?

সাইদুল ইসলাম : সুদ নিয়ে যাদের আপত্তি তাদের জন্য ৬-৭টা শাখা আছে। তারা সেখান থেকে লেনদেন করতে পারবেন। এই শাখাগুলো একটি শরিয়াহ বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়।

যুগান্তর : খেলাপি ঋণে হাবুডুবু খাচ্ছে ব্যাংক খাত, পরিত্রাণের উপায় কী?

সাইদুল ইসলাম : বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা যাচ্ছে। করোনার পর শুরু হলো দেশে দেশে যুদ্ধ। এ সময়ে অনেকে বিনিয়োগ করে কাঙ্ক্ষিত রিটার্ন পাননি। এছাড়া পণ্যের খরচ বেড়ে গেছে। আগে যেটা ১০ টাকায় কেনা যেত এখন সেটা কিনতে ১৫ থেকে ২০ টাকা লেগে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান হঠাৎ লোকসানে পড়ে গেছে। এসব কারণেও খেলাপি হয়। তবে সামর্থ থাকার পরও যারা টাকা পরিশোধ করেন না, সেসব ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্ত করে ধরা দরকার। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সব সময় থাকেন। যারা ঠিকমতো টাকা পরিশোধ করতে চান না। এদের ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। এছাড়া কয়েকটি ব্যাংকে অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এগুলো নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে।

যুগান্তর : ব্যাংক খাতে বেনামি ঋণ বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক পরিদর্শনেও বিষয়টি উঠে আসে; এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন?

সাইদুল ইসলাম : নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। নিশ্চয়ই এ বিষয়ে গাইড লাইন আসবে। যদিও বিষয়টি কষ্টসাধ্য, তবুও আজ না হয় কাল উত্তরণ ঘটবে।

যুগান্তর : ব্যাংক ঋণে সুদহার বেড়ে যাচ্ছে, এ বিষয়ে কিছু বলুন?

সাইদুল ইসলাম : ব্যবসায়ী হিসাবে বলব, ঠিক হচ্ছে না। তবে নাগরিক হিসাবে বলব, ঠিক আছে। কারণ সুদহার না বাড়ালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। অর্থনীতির একটি সূচকের সঙ্গে অন্য সূচক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এক দিক ঠিক করতে গেলে অন্য দিক বেঠিক হবে। এটাই নিয়ম। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম