বাড়তি আয় ও উন্নত জীবনের আশা
গ্রামের মানুষ শহরমুখী
পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সরকার চাচ্ছে গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দিতে। গ্রামকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে। শহরের ওপর চাপ কমাতে। এর মাধ্যমে গ্রাম থেকে শহরে মানুষের ছুটে আসা
কমাতে, উল্টো শহরের মানুষকে গ্রামে ফেরাতে। এ লক্ষ্যে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়ানো, চর জীবিকায়ন প্রকল্প, ঘরে ফেরা কর্মসূচি, গৃহায়ন প্রকল্প, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প। তারপরও গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত মনিটরিং দ্য সিচ্যুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) প্রকল্পের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস জরিপ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়- বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বাড়তি আয় করা এসব কারণেই গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে বেশি মানুষ। তবে বিবাহ, খণ্ডকালীন কাজের সন্ধান, কর্মসংস্থানে বদলি, বন্যা, নদী ভাঙন, ব্যবসা, পরিবারের সঙ্গে বসবাস, অবসর জীবন কাঠামো- ইত্যাদি কারণেও গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কমছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে গ্রামের মানুষের মধ্যে প্রতি হাজারে শহরে আসত ২৮ দশমিক ২ জন। ২০১৮ সালে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৬ জনে। ওই সময়ে প্রতি হাজারে ২ দশমিক ৪ জন গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রবণতা বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, আগে শুধু জীবিকার তাগিদে মানুষ শহরে এলেও এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। উন্নত জীবনের তাগিদেও শহরে পাড়ি জমাচ্ছে মানুষ। স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা ও নাগরিক জীবনের আরাম আয়েশের কথা চিন্তা করেই শহরের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। এ অবস্থায় জনসংখ্যার ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়ছে শহরগুলো। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা। মানুষের ভিড়ে দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
বিবিএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে গ্রাম থেকে শহরে আসছে নমুনা এলাকার প্রতি হাজারে ৩০ দশমিক ৬ জন মানুষ। ২০১৭ সালে প্রতি এক হাজারে ৩০ দশমিক ৩ জন মানুষ শহরে আসত। ২০১৬ সালে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসত ৩০ দশমিক ৩ জন, ২০১৫ সালের জরিপে ছিল ২৯ দশমিক ৫ জন এবং ২০১৪ সালে আসত ২৮ দশমিক দু’জন। ২০১৩ সালে ছিল ২৭ দশমিক দু’জন। ২০১২ সালে ছিল ২৬ দশমিক দু’জন এবং ২০১১ সালে ছিল ২৩ দশমিক ৭ জন। এভাবেই প্রতিবছর গ্রাম থেকে শহরে আসছে মানুষ।
ড. শামসুল আলম আরও বলেন, সরকার গ্রামকে শহর বানানোর ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনী ইশতেহারে। অর্থাৎ গ্রামে যাবে শহরের সব সুবিধা। এজন্য শুরু থেকেই বাজেটে এ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ চলছে। সেখানেও গ্রামকে শহর বানানোর যে প্রতিশ্রুতি আছে তার প্রতিফলন ঘটানো হবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে মানুষকে আর গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বসবাস করতে হবে না। বরং অনেক মানুষ গ্রামীণ পরিবেশে উন্নত জীবন যাপনের জন্য শহর ছেড়ে গ্রামে যাবে বলে আশা করছি। বিবিএস’র প্রতিবেদনে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষের হার গত কয়েক বছর ধরে কমছে।
বিবিএস’র প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে শহর ছেড়ে গ্রামে স্থানান্তর করেছে নমুনা এলাকার প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে ৪ দশমিক ৯ জন। ২০১৭ সালে শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়েছিল ৫ জন। ২০১৬ সালে শহর ছেড়ে গ্রামে গেছে নমুনা এলাকার প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে পাঁচজন, যা ২০১৫ সালে ছিল প্রতি হাজারে পাঁচ দশমিক একজন। ২০১৪ এবং ২০১৩ সালে ছিল একই হার। অর্থাৎ প্রতি হাজারে পাঁচ দশমিক একজন। ২০১২ ও ২০১১ সালে শহর ছেড়ে গ্রামে যেত প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে পাঁচ দশমিক তিনজন।
প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এমএসভিএসবি প্রকল্পের পরিচালক একেএম আশরাফুল হক যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ১৯৮০ সাল থেকে দ্বৈব পদ্ধতিতে জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ ও স্থানান্তরে তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। শুরুতে মাত্র ১০৩টি নমুনা এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করা হতো। ধাপে ধাপে তা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দুই হাজারের অধিক নমুনা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
