রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনিশ্চয়তা: প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ
jugantor
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনিশ্চয়তা: প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ

  সম্পাদকীয়  

১১ জুন ২০১৯, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, মিয়ানমার তাদের নিতে চায় না। বিভিন্ন দাতা সংস্থারও এ ব্যাপারে অনীহা রয়েছে। অনেক সংস্থা চায় না রোহিঙ্গারা ফিরে যাক।

কারণ তারা ফিরে গেলে তাদের চাকরি থাকবে না, ফান্ড আসবে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সত্যতা নানাভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর দিনক্ষণও নির্ধারিত হয়েছিল; কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা বাস্তবে রূপ নেয়নি। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে ইতিবাচক বক্তব্য দেয়া হলেও এ ব্যাপারে তাদের ন্যূনতম সদিচ্ছার প্রমাণ মেলেনি।

উপরন্তু মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি সম্প্রতি বলেছেন, ক্রমবর্ধমান মুসলিম জনগোষ্ঠীকে তার দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। এর ফলে নিধন ও নিপীড়নের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদ করা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আদৌ তারা আগ্রহী কিনা তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা বললেও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তাদের দেখা যায়নি। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি রয়ে গেছে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মাঝে।

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এ ছাড়া আগে আসা আরও প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা এ দেশে অবস্থান করছে। প্রজননের মাধ্যমে তাদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অনেকে এটিকে ‘টাইমবোমা’ বলেও অভিহিত করছেন। বাংলাদেশ এমনিতেই অত্যধিক জনসংখ্যার দেশ।

তার ওপর এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহন করতে হচ্ছে আমাদের। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলার ওপর, সর্বোপরি অর্থনীতির ওপর। কক্সবাজার ও উখিয়ার স্থানীয় জনসাধারণের চেয়ে রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন বেশি। এটি ওই এলাকার জনগণের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গারা বাস্তবিকই দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বোঝা বছরের পর বছর টানা কোনোমতেই সম্ভব নয়। তাদের যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে। এজন্য নিতে হবে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করতে সম্মত না হলে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার কথাও ভাবতে হবে। তবে এর ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সব দিক চিন্তা করে সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের।

প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ওআইসি সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। আগামী মাসে তার চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে যথাযথ কূটনীতি ও দরকষাকষির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশ এরই মধ্যে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগে যোগ দিয়েছে।

এর বিনিময়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সম্ভবপর হলে সংকট উত্তরণ হবে বলে আশা করা যায়। বস্তুত রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, চীন ও রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করছে এ সংক্রান্ত অনেক কিছু।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনিশ্চয়তা: প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ

 সম্পাদকীয় 
১১ জুন ২০১৯, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ
রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা। ফাইল ছবি

রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, মিয়ানমার তাদের নিতে চায় না। বিভিন্ন দাতা সংস্থারও এ ব্যাপারে অনীহা রয়েছে। অনেক সংস্থা চায় না রোহিঙ্গারা ফিরে যাক।

কারণ তারা ফিরে গেলে তাদের চাকরি থাকবে না, ফান্ড আসবে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সত্যতা নানাভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর দিনক্ষণও নির্ধারিত হয়েছিল; কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা বাস্তবে রূপ নেয়নি। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে ইতিবাচক বক্তব্য দেয়া হলেও এ ব্যাপারে তাদের ন্যূনতম সদিচ্ছার প্রমাণ মেলেনি।

উপরন্তু মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি সম্প্রতি বলেছেন, ক্রমবর্ধমান মুসলিম জনগোষ্ঠীকে তার দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। এর ফলে নিধন ও নিপীড়নের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদ করা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আদৌ তারা আগ্রহী কিনা তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা বললেও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তাদের দেখা যায়নি। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি রয়ে গেছে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মাঝে।

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এ ছাড়া আগে আসা আরও প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা এ দেশে অবস্থান করছে। প্রজননের মাধ্যমে তাদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অনেকে এটিকে ‘টাইমবোমা’ বলেও অভিহিত করছেন। বাংলাদেশ এমনিতেই অত্যধিক জনসংখ্যার দেশ।

তার ওপর এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহন করতে হচ্ছে আমাদের। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলার ওপর, সর্বোপরি অর্থনীতির ওপর। কক্সবাজার ও উখিয়ার স্থানীয় জনসাধারণের চেয়ে রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন বেশি। এটি ওই এলাকার জনগণের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গারা বাস্তবিকই দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বোঝা বছরের পর বছর টানা কোনোমতেই সম্ভব নয়। তাদের যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে। এজন্য নিতে হবে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করতে সম্মত না হলে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার কথাও ভাবতে হবে। তবে এর ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সব দিক চিন্তা করে সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের।

প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ওআইসি সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। আগামী মাসে তার চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে যথাযথ কূটনীতি ও দরকষাকষির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশ এরই মধ্যে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগে যোগ দিয়েছে।

এর বিনিময়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সম্ভবপর হলে সংকট উত্তরণ হবে বলে আশা করা যায়। বস্তুত রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, চীন ও রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করছে এ সংক্রান্ত অনেক কিছু।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

ঘটনাপ্রবাহ : রোহিঙ্গা বর্বরতা