Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যু: নিষিদ্ধ হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে কীভাবে?

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যু: নিষিদ্ধ হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে কীভাবে?

বুধবার বিকালে রাজধানীর রূপনগরে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। বেলুনে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মুহূর্তেই প্রাণ গেছে ছয় শিশুর, আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন, আহতদের ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে দেখা গেছে- শিশুদের কারও হাত নেই, কারও নেই পা, কারও আবার বেরিয়ে গেছে নাড়িভুঁড়ি। ঝলসে গেছে অনেকের চেহারা। মর্মান্তিক সেই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বেলুনে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে এ ধরনের ঘটনা। সিলিন্ডারের ভেতরেই হাইড্রোজেন তৈরি করে বেলুনে গ্যাস ভরানোর যে প্রক্রিয়া চালু রয়েছে, তার ফলেই ঘটছে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা।

অথচ বিস্ফোরক পরিদফতর জানিয়েছে, এ ধরনের গ্যাস তৈরি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। বস্তুত নিরাপদ হিলিয়ামের পরিবর্তে নিষিদ্ধ হাইড্রোজেন ব্যবহারের কারণেই বছরের পর বছর ধরে বিস্ফোরিত হচ্ছে সিলিন্ডার।

বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসাইন বলেছেন, ‘উন্নত বিশ্বে হাইড্রোজেন দিয়ে বেলুন ফোলানো বন্ধ হওয়ার ২০০ বছর পেরিয়ে গেছে। হিলিয়াম আবিষ্কারের পর এই নিরাপদ গ্যাস দিয়েই তারা বেলুন ফোলায়। অথচ আমাদের দেশে হাইড্রোজেন দিয়ে বেলুন ফোলানোর প্রক্রিয়া এখনও বন্ধ হয়নি।’ কেন তা বন্ধ হয়নি, এ প্রশ্ন খুব জোরালোভাবে উঠেছে বুধবারের ঘটনার পর।

বিস্ফোরক পরিদফতর বলছে- তারা পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বিপজ্জনক সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে বহুবার। প্রশ্ন হচ্ছে, তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে পুলিশ প্রশাসন কী করছে? অবাক কাণ্ড, হাইড্রোজেন গ্যাস ভরে বেলুন ফোলানো নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও একের পর এক ঝরছে প্রাণ!

আমরা প্রশ্ন করতেই পারি, বেলুনওয়ালারা যখন তাদের সিলিন্ডার থেকে বেলুন ফুলিয়ে তাদের সামনে থাকা শিশুদের কাছে তা বিক্রি করে, তখন পুলিশ কি সামনে এগিয়ে এসে পরীক্ষা করতে চায় সিলিন্ডারের ভেতরেই গ্যাস প্রস্তুত করে তা ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা? নিশ্চয়ই তারা সেই দায়িত্ব পালন করে না। অতঃপর তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।

কথা আরও আছে। সাধারণত দুই কারণে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হতে পারে। প্রথমত, সিলিন্ডারটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলে; দ্বিতীয়ত, বেলুনে গ্যাস ভরার সময় অসাবধানতাবশত লিকেজ হলে। ব্যবহৃত সিলিন্ডারটি মেয়াদোত্তীর্ণ কিনা তা-ও পরীক্ষা করার কেউ নেই! অথচ সিলিন্ডারের মেয়াদ ও এর ভেতরে থাকা কী গ্যাস দিয়ে বেলুন ফোলানো হচ্ছে, তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না।

বেলুনওয়ালা দেখলেই শিশুরা তার সামনে গিয়ে জড়ো হবে এটাই স্বাভাবিক। সিলিন্ডার তাদের মৃত্যুর কারণ ঘটাতে পারে এ বোধ তাদের না থাকারই কথা। সিলিন্ডারের বিস্ফোরণজনিত কারণে শিশুদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব বড়দেরই। অথচ আমরা অভিভাবক শ্রেণি অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ দায়িত্ব পালন করছি না। এটা এক বড় ধরনের অন্যায় শুধু নয়, পাপও বটে। বুধবারের ঘটনার পর থেকে পুলিশসহ বয়স্ক পথচারীদের দায়িত্ব হওয়া উচিত বিপজ্জনক সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে বিস্ফোরক অধিদফতরকেও সক্রিয় হতে হবে অবশ্যই।

বেলুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম