বিতর্কিত কোম্পানি নয়: পাথর উত্তোলনে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করুন
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের একমাত্র পাথরখনি মধ্যপাড়া পাথরখনিতে পাথর উত্তোলনের কাজ অনভিজ্ঞ একটি চীনা কোম্পানিকে দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অথচ বর্তমানে পাথর উত্তোলনের কাজে সফলতা দেখানো দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে তৈরি জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) ভালো করছে, এমনকি প্রথমবারের মতো জিটিসির পারফরমেন্সের ওপর নির্ভর করে লাভের মুখ দেখেছে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে এ সময়ে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৪ টন উত্তোলিত পাথর থেকে ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৯৪ টন বিক্রির মাধ্যমে। বাকি পাথর বিক্রি করা হলে লাভের পরিমাণ বাড়বে এবং এমজিএমসিএল সঠিক পথে অগ্রসর হবে তা বলাবাহুল্য।
কিন্তু এমন অবস্থায় অভিজ্ঞ ও বর্তমান পাথর উত্তোলন কোম্পানি জিটিসির সঙ্গে চুক্তি সমাপ্ত করে অনভিজ্ঞ চীনা কোম্পানি এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামকে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, অনভিজ্ঞ কোম্পানি পাথর উত্তোলনের কাজ করলে যেহেতু খনি, পরিবেশ ও আশপাশের মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা, সেহেতু সবকিছু ভালোভাবে সমীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিকল্প নেই।
জানা যায়, মধ্যপাড়া পাথরখনি থেকে পাথর উত্তোলনে ৬ বছরের জন্য জিটিসির সঙ্গে চুক্তি করে এমজিএমসিএল। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এর মধ্য এমজিএমসিএলের অসহযোগিতা ও বিভিন্ন কারণে পাথর উত্তোলনের কাজ বন্ধ থাকে ৪৭ মাস।
এমনকি কোম্পানিটির পাওনা আটকে রাখা হয় ৩ বছর। তারপরও তারা যতটুকু সময় পেয়েছে, ততটুকু সময়ে ভালো পারফরমেন্স করেছে। ফলে চুক্তি মোতাবেক পাথর উত্তোলনের সময় তারা পায়। এ জন্য এমজিএমসিএলের মাদার সংস্থা পেট্রোবাংলা থেকেও অভিজ্ঞ কোম্পানিকে কাজ দেয়া বা বিদ্যমান কোম্পানির সঙ্গে অস্থায়ী চুক্তির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটি আমলে না নিয়ে বড় পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা উত্তোলনে নিযুক্ত চীনা কোম্পানি এক্সএমসি-সিএমসিকে প্রথমে অস্থায়ীভাবে ও পরে ৬ বছরের জন্য পাথর উত্তোলনের কাজ দেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এজন্য কোম্পানিটির কয়লা উত্তোলনের অভিজ্ঞতাকে পাথর উত্তোলনের অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অথচ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। যেখানে কয়লা উত্তোলন করা হয় ভেঙে ভেঙে, সেখানে পাথর উত্তোলন করতে হয় গভীর বোরিং করে ও পদ্ধতিগত ব্লাস্টিংয়ের মাধ্যমে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনভিজ্ঞ কোম্পানিকে কাজ দেয়া হলে যে কোনো দুর্ঘটনার দায়দায়িত্ব কে নেবে এবং এমনটি কেন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
এক্সএমসি-সিএমসির মাধ্যমে কয়লা উত্তোলনেও আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। কোম্পানিটি টনপ্রতি কয়লা উত্তোলনের জন্য প্রথমে ৩৮ ডলার, পরে তিন দফা বাড়িয়ে বর্তমানে ৯২ ডলার করে নিচ্ছে। অথচ পৃথিবীর কোনো দেশেই টনপ্রতি কয়লা উত্তোলন ৩০ ডলারের বেশি নেই। আমাদের সস্তা শ্রমের কারণে সেটা আরও কম হওয়ার কথা থাকলেও ঘটছে তার উল্টোটা। এমন একটি কোম্পানিকে তোড়জোড় করে পাথর উত্তোলনের কাজ দেয়ার পরিকল্পনার পেছনে কার কী স্বার্থ, খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
