Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব

Icon

ইকবাল হোসেন হীরা

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব

বন্যপ্রাণী। ছবি: সংগৃহীত

আজ ৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য প্রাণীকুল বাঁচাই’। বিশ্বের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদকুলের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এ দিবসের মূল লক্ষ্য। একটা সময় বন্যপ্রাণী ছিল প্রাণিবিদ্যা, বনবিদ্যা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিষয়।

কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আমাদের অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে ইতিমধ্যেই উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির এক বিরাট অংশ হারিয়ে গেছে প্রকৃতি থেকে, যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়নসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

এর সর্বশেষ সংযোজন নতুন নতুন প্রাণঘাতী রোগের মহামারী। তাই বিশ্ব আজ সোচ্চার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে। এতদসত্ত্বেও এখনও প্রতিদিন উজাড় হচ্ছে ২ লাখ একর বন আর ১৫০-২০০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী! এর সবচেয়ে বড় কারণ হল সচেতনতার অভাব।

গৃহপালিত প্রাণী বাদে বনে বসবাসরত সব প্রাণীই বন্যপ্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। দেয়ালের টিকটিকি থেকে শুরু করে আঙ্গিনায় বিচরণকারী কাক, চড়ুইও বন্যপ্রাণী। বন হল বন্যপ্রাণীর আবাস। ক্রমাগত বন ধংসের ফলে বন্যপ্রাণী খাদ্য সংগ্রহ আর আশ্রয়ের খোঁজে লোকালয়ে এসে পড়ে আর মানুষের হাতে প্রাণ হারায়।

বন্যপ্রাণীও জানে, লোকালয়ে হানা দিলে তাদের প্রাণনাশের আশঙ্কা আছে। তথাপি তারা অনন্যোপায় হয়েই লোকালয়ে আসে খাদ্য সংগ্রহ করতে। বুনো ফল-ফলাদি আজ শহরের ফলের দোকানে বিক্রির জন্য সজ্জিত। প্রাকৃতিক বন উজাড় হওয়ার পথে। তাহলে ওরা টিকবে কী করে?

সামান্য মৌসুমি ফল রক্ষায় মানুষ আজ কারেন্ট জাল বিছিয়ে রাখে আর তাতে জড়িয়ে প্রাণ হারায় নিরীহ পাখিরা। ক্ষতিপূরণের বিধান থাকা সত্ত্বেও গুটিকতক বুনোহাতির কবল থেকে ফসল রক্ষা করতে বিদ্যুতের ফাঁদ পাতা হয়, যাতে জড়িয়ে প্রাণ হারায় বুনোহাতি। কতটুকু অসহায় হলে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে হানা দেয়, তা মানুষের অনুধাবন করা উচিত।

কিছু মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষ আছে, যাদের হাজাররকম খাবার বাদ দিয়ে নজর পড়ে বন্যপ্রাণীর দিকে। আর তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য ঘৃণিত ও আইনবহির্ভূত পেশা বেছে নিয়েছে কিছুসংখ্যক শিকারি। কিছু মানুষের আবার আছে বন্যপ্রাণীর দেহাংশ সংগ্রহ করে শো-পিস হিসেবে প্রদর্শন করার অভ্যাস।

ফলাফল, বন্যপ্রাণীবিহীন বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে এসব মানুষের কারণে। সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিকে সাজিয়েছেন বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ আর পরিবেশের অন্যান্য উপাদান দিয়ে। একেকটা বন্যপ্রাণী যেন একেকটা পুঁতি। পুঁতির মালা ইতিমধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফলে ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি।

প্রতিশোধ হিসেবে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। বজ্রপাত, সুনামি, সুপারসাইক্লোনসহ নানারকম প্রকৃতিক দুর্যোগ সময়ে-অসময়ে হানা দিয়ে জীবন-জীবিকা তছনছ করে দিচ্ছে। এছাড়া নির্বোধদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে এসেছে নিপাহ্, করোনার মতো ভাইরাস।

বন্যপ্রাণী থাকত বনে, লোকচক্ষুর আড়ালে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের নিজেদের জটিল কিছু রোগ আছে। কিছু মানুষের বিকৃত খাদ্যাভ্যাসে আর তাদের সান্নিধ্যে আসার ফলে নিরাময় অযোগ্য এসব রোগ মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রতিটি ধর্মেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় বিশ্বের সব নাগরিককে সোচ্চার আর সচেতন হতে হবে। যেখানেই বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটিত হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে স্থানীয়দের। অপরাধীদের সংখ্যা খুবই অল্প।

নতুন প্রজন্মকে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে কাজটা খুব সহজ হবে আর ভবিষ্যৎ পৃথিবী হবে নিরাপদ। সে জন্য প্রয়োজন প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্পর্কিত কারিকুলাম।

শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের গল্প, উপন্যাস, ছড়া হোক পরিবেশ ও প্রকৃতিবান্ধব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হোক পরিবেশ ও প্রকৃতিবান্ধব। দেশে গড়ে উঠুক অন্তত একটি প্রকৃতি বিশ্ববিদ্যালয়। তাহলেই আমরা পাব জীববৈচিত্র্যবান্ধব বাংলাদেশ এবং নিরাপদ পৃথিবী।

ইকবাল হোসেন হীরা : সদস্য, মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন

 

ইকবাল হোসেন হীরা বন্যপ্রাণী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম