Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব ও সিরিঞ্জ: দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব ও সিরিঞ্জ: দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে সাধারণ মাস্ক দেয়ার ঘটনার পর এবার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব ও সিরিঞ্জ সরবরাহ এবং সেগুলো ব্যবহার করে উপসর্গধারীদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে যেসব টিউব সরবরাহ করা হচ্ছে, সেগুলোর মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত।

এর মানে হল, ইতোমধ্যে এসব টিউবের মেয়াদোত্তীর্ণের পর আরও দুই বছর পার হওয়া টিউব ব্যবহার করা হয়েছে।

অন্যদিকে করোনা উপসর্গধারীদের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে যেসব সিরিঞ্জ দেয়া হচ্ছে, সেগুলোর মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত; অর্থাৎ এটিরও মেয়াদোত্তীর্ণের পর এক বছরের বেশি সময় পার হয়েছে।

মানবদেহ থেকে রক্ত নেয়া এবং সেই রক্ত রাখার যে পাত্র- এ দুটোই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি নিয়মের পরিপন্থী ও বিপজ্জনক। অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত এ ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ যুক্তিযুক্ত হলেও আশ্চর্যজনকভাবে উক্ত ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, এমনকি এ ব্যাপারে কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি; শুধু মৌখিকভাবে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

তবে বিষয়টি অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), যা অভিনন্দনযোগ্য।

সাধারণত রোগব্যাধি শনাক্তে মানুষের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহের কাজে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ও ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

নিরাপদ রক্ত সংগ্রহ, পরিসঞ্চালন ও পরীক্ষার কাজে মানসম্পন্ন ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ও ভ্যাকুয়াম টিউবের কোনো বিকল্প নেই, তা বলাই বাহুল্য।

এসব পণ্যের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ দেয়া হয়; কারণ এসব পণ্য জীবাণুমুক্ত করা থাকে এবং প্লাস্টিক পণ্যের মানের ব্যবহার উপযোগিতা নিশ্চিত করে। সঙ্গত কারণেই এসব সরঞ্জাম মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তা আর জীবাণুমুক্ত থাকে না।

ফলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এগুলো দ্বারা রক্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হলে তা কোনোভাবেই মানসম্পন্ন থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা, মেয়াদোত্তীর্ণ সিরিঞ্জ মানবদেহে ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এটি থেকে মানুষের সুস্থ শরীরেও বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে।

দুঃখজনক হল, মানুষের জীবন রক্ষার্থে মেয়াদোত্তীর্ণ যে কোনো প্রকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কথা থাকলেও দেশে এ বিষয়টি মোটেই গুরুত্ব পায় না। এর কারণ মূলত স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার অভাব।

অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য খাতে যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়ের নামে অবাধে লুটপাট চালানোর জন্য একাধিক সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে। এ ধরনের লুটপাট অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয়সাপেক্ষে সঠিক ও নির্ভুল চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার অপরিহার্য হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন, যা মোটেই কাম্য নয়।

বস্তুত, রোগীর কল্যাণ ও সেবার নামে স্বাস্থ্য খাতে যে লুটপাট ও দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম হয়েছে, এর নাটেরগুরুরা সরকারি কোষাগারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করলেও দেখার কেউ নেই। দেখার দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ শোনা যায়।

এর বড় প্রমাণ দেশে মহামারীর এই কঠিন মুহূর্তে স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকারী মানসম্পন্ন মাস্ক এবং করোনা উপসর্গধারীদের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ, পরিসঞ্চালন ও পরীক্ষার কাজে মানসম্পন্ন ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ও ভ্যাকুয়াম টিউব নিয়ে দুর্নীতি-জালিয়াতি। এ অবস্থায় মাস্কসহ মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব ও সিরিঞ্জ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

করোনাভাইরাস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম