বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্দরে ডেমারেজ চার্জ মওকুফের বিকল্প নেই
বর্তমান পরিস্থিতিতে মওকুফের বিকল্প নেই
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনাভাইরাসের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে অর্থনীতি। বর্তমান সময়ে সব দেশেরই অর্থনীতির চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত হওয়ায় করোনার আঘাতে এ খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য সবাই বিভিন্ন প্যাকেজ, বেইলআউট ও প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ সরকারও শিল্পকে বাঁচাতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা প্রশংসাযোগ্য। তবে কেবল প্যাকেজ ঘোষণা নয়, তার সঠিক বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের চার্জ, নানা ধরনের ফি ও জরিমানা মওকুফের মধ্য দিয়েই অর্থনীতির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে।
এছাড়া করোনা মহামারীর কারণে পণ্য ডেলিভারি নিতে না পারায় আমদানি-রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের যাতে হয়রানি হতে না হয়; বাড়তি লোড-আনলোড ফি, বন্দরে বেশি সময় কনটেইনার থাকার কারণে ডেমারেজ ফি দিতে না হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে।
জানা যায়, করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে প্রাইভেট আইসিডি তথা অফডকের মাত্রাতিরিক্ত চার্জ এবং শিপিং কোম্পানিগুলোর ডেমারেজ। এছাড়া দেশব্যাপী লকডাউনের সময় ইচ্ছা থাকলেও কনটেইনার ডেলিভারি নিতে না পারায় চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরের কনটেইনার জট ও নানামুখী চার্জ ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। কাজেই দেশীয় কোম্পানি ও উদ্যোক্তাদের রক্ষায় ডেমারেজ, জরিমানা ইত্যাদি সাময়িকভাবে মওকুফের বিকল্প নেই।
করোনাকালে সরকারের অনেক সিদ্ধান্তেই সমন্বয়ের অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকার অর্থনীতি রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সত্যিকারের স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। যারা সুবিধাভোগী তারাই যদি পরামর্শ দিতে না পারেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার বড় উদ্যোগগুলো ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।
এ কারণে আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্ট সব সিদ্ধান্ত সমন্বিতভাবে নেয়া ও তার বাস্তবায়ন দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকার আমদানিকারকদের সঙ্গে পরামর্শ করে সবার জন্য ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত নিতে ও তা বাস্তবায়ন করতে পারে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে চার্জ ও জরিমানা আদায় নৈতিক ও মানবিক হতে পারে না।
কারণ, এই কঠিন পরিস্থিতিতে উৎপাদন ও আয় না থাকার পরও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানসহ নানা ধরনের ব্যয় নির্বাহ করতে হচ্ছে তাদের। সর্বোপরি ব্যবসায়ীরা বৃহৎ করদাতা হিসেবে সরকারের উন্নয়নের অংশীদার- এটি বিবেচনায় নিয়েও এ মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
জাহাজ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের কনটেইনার নামার পর চার দিন পর্যন্ত ফ্রি টাইম থাকে। তারপর থেকে বিভিন্ন স্তরে ডেমারেজ চার্জ-জরিমানা আদায় শুরু হয়।
এ ক্ষেত্রে ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ ডলার, দ্বিতীয় সপ্তাহে ১২ ডলার এবং তৃতীয় সপ্তাহে ২৪ ডলার করে ডেমারেজ গুনতে হয়। ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে এই চার্জ দ্বিগুণ হারে আরোপিত হয়। এর পাশাপাশি বেসরকারি আইসিডিগুলো বন্দর নির্ধারিত স্টোর রেন্টের ওপর ১৫ থেকে ২২ শতাংশ বাড়তি চার্জ আদায় করছে।
আয়-উৎপাদন বন্ধ থাকার সময় এ পরিমাণ জরিমানা পরিশোধ কীভাবে সম্ভব? তাই এ ব্যাপারে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত এবং তা দ্রুত কার্যকরের পথ খোঁজা দরকার।
আশার কথা, চার মে পর্যন্ত সব ধরনের স্টোর চার্জ মওকুফ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ; কিন্তু বেসরকারি আইসিডিগুলো সেটা না মেনে ডেমারেজ আদায় অব্যাহত রেখেছে। সবাই যাতে ডেমারেজ চার্জসহ সব ধরনের জরিমানা মওকুফ করে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে অবিলম্বে।
