Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সুদারোপ স্থগিতের নির্দেশ

ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ করা হোক

Icon

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুদারোপ স্থগিতের নির্দেশ

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ব্যাংকের সব ধরনের ঋণের ওপর সুদ আরোপ দুই মাস স্থগিত করার নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা হয়েছে, ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর সব ঋণের সুদ ব্লকড হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব সুদ গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না।

করোনাজনিত জরুরি পরিস্থিতিতে ঋণের সুদ স্থগিত করার বিষয়টি একটি সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ সন্দেহ নেই। তবে শিল্পের জন্য এ মুহূর্তে প্রয়োজন ব্যাংক ঋণের সুদ এক বছরের জন্য স্থগিত রেখে তা মওকুফ করা। বস্তুত, গত মার্চ থেকে কমপক্ষে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ সুদ আরোপিত হবে, সেগুলো স্থগিত রেখে তা মওকুফ করার দাবি করে আসছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। তাহলে তারা চলমান মন্দার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন। তাই প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশা করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।

ব্যবসায়ীদের এ প্রত্যাশা অযৌক্তিক নয়। মার্চের শুরু থেকেই করোনার প্রভাবে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কারখানা বন্ধ থাকায় মালিকদের নিয়মিত আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এর বিপরীতে ব্যয়ের হিসাব থেমে নেই। ব্যয়ের চাপ রয়েছে প্রবল। সেক্ষেত্রে বেশির ভাগ শিল্পমালিক শেষ পর্যন্ত ব্যাংকের দায়দেনা পরিশোধ করতে পারবেন না।

ফলে অনেকে ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবেন। আর ভালো উদ্যোক্তারা খেলাপি হলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রাখা কঠিন হবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রাখা সম্ভব না হলে শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরির সুরক্ষাসহ তাদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধেও দেখা দেবে অনিশ্চয়তা। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কিংবা আপাতত ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্প উদ্যোক্তাদের চলতি ঋণের কিস্তি এবং সুদের হিসাব স্থগিত রাখা হলে মন্দার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে ভালো হয় এক বছরের সুদ মওকুফ করা হলে। আমরা মনে করি, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে একটি ঘোষণা আসা জরুরি।

আমরা জানি, এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুবিবেচনাপ্রসূত পর্যবেক্ষণ রয়েছে। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘করোনা মহামারীর কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু স্থবির হয়ে আছে। তাই ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কীভাবে এর সমাধান করা যায়, সেটি আমি দেখব।’ তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনাও দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক সুদ আরোপ স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে। কাজেই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঋণের সুদ ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ করার অপরিহার্যতাও প্রধানমন্ত্রী অনুধাবন করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

বস্তুত, করোনাজনিত জরুরি পরিস্থিতির অবসান কবে হবে, তা অনিশ্চিত। এ পরিস্থিতি যত দিন স্থায়ী হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির ক্ষতি হবে তত বেশি। এ বাস্তবতায় আপাতত ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের ঋণে সুদ আরোপ স্থগিত ও মওকুফ করা হোক। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারি ব্যাংকগুলোকে অন্যভাবে প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় ব্যাংকগুলোকে মোটা অঙ্কের তহবিলের জোগান দেয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড অনেক কমে যাবে। কাজেই ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষতি পূরণ করা ব্যাংকগুলোর পক্ষে অসম্ভব হবে না।

করোনাভাইরাস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম