Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

করোনা নিয়ন্ত্রণে ভিয়েতনাম মডেল

আমাদেরও এই পথে যেতে হবে

Icon

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

করোনা নিয়ন্ত্রণে ভিয়েতনাম মডেল

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বের যে গুটিকয় দেশ সফল হয়েছে, তাদের অন্যতম ভিয়েতনাম। প্রাণঘাতী এ মহামারীতে যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত, তখন এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩২০ এবং মৃতের সংখ্যা শূন্য। অথচ সাড়ে নয় কোটিরও বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভিয়েতনামকে একটি জনবহুল দেশই বলা চলে।

তাছাড়া করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের সঙ্গে রয়েছে ভিয়েতনামের দীর্ঘ স্থলসীমান্ত। এ দু’দেশের মধ্যে রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ধরনের যোগাযোগ। তা সত্ত্বেও ভিয়েতনাম কীভাবে করোনো নিয়ন্ত্রণে সফল হল, তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কৌতূহলের সীমা নেই। তাদের পর্যবেক্ষণে ভিয়েতনামের এ সাফল্যের পেছনে কয়েকটি বিষয় ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিলেও তা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি বা হচ্ছে না। এ অবস্থায় দেরিতে হলেও ভিয়েতনামের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো গেলে এখনও হয়তো আমরা করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারব।

ফেব্রুয়ারিতে যখন ভিয়েতনামে প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায়, তখন থেকেই তারা তিন স্তরের কন্টাক্ট ট্রেসিং (আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা এসেছিল) করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। বিমানবন্দরে দেশের বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করা হয়। তাদের একটি স্বাস্থ্য ফরম পূরণ করতে হয়। সেখানে যাত্রীদের উল্লেখ করতে হয় তারা কার কার সংস্পর্শে এসেছে, কোথায় কোথায় গিয়েছে। দেশটিতে যে কোনো বড় শহরে ঢুকতে বা সেখান থেকে বেরোতে গেলেও এসব তথ্য জানাতে হয়। কোনো সরকারি দফতর বা হাসপাতালে ঢুকতে গেলেও এসব তথ্য দিতে হয়। কেউ স্বাস্থ্য ফরমে ভুল তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর পাশাপাশি প্রথম থেকেই দেশজুড়ে বিপুল পরিসরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়। দেশটিতে টার্গেট করে করে কঠোর কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা চালু করা হয়। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে যারাই বিদেশ থেকে এসেছে, তাদের সবাইকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে এবং করোনা পরীক্ষা করতে হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে ভিয়েতনাম আরেকটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে, সেটি হচ্ছে তাদের সফল গণসংযোগ। শুরু থেকেই সরকার মারাত্মক এ ভাইরাসটি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয় নানাভাবে।

এর বিপরীতে বাংলাদেশের করোনা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, করোনার নমুনা পরীক্ষা এবং এ রোগে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে এখনও মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বস্তুত দেশে যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা চলছে, তাতে করোনা মোকাবেলায় দ্রুত সাফল্য অর্জন করা কঠিন। বর্তমানে কেবল তারাই পরীক্ষা করাতে আসছেন, যাদের করোনা উপসর্গ রয়েছে। যাদের উপসর্গ নেই, তারা পরীক্ষা করানোর কথা ভাবছেনই না। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত ৮০ শতাংশ মানুষেরই কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। পরীক্ষা না করানোর কারণে এই ৮০ শতাংশ মানুষকে পৃথক করা বা চিকিৎসার আওতায় আনা হয় না। ফলে তাদের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। তাছাড়া দেশে কোয়ারেন্টিন ও ‘লকডাউন’ কঠোরভাবে কার্যকর করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা ভিয়েতনামের মতো আমাদেরও তিন স্তরের কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন। তারা বলছেন, মাসের পর মাস সর্বত্র লকডাউন করে দেশ চালানো সম্ভব নয়। যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, কেবল সেসব এলাকায় কঠোরতা আরোপ করতে হবে। জেলা থেকে জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। সর্বোপরি ব্যাপক পরিসরে মানুষকে করোনা পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যত দ্রুত এসব দিকে দৃষ্টি দেবে ততই মঙ্গল।

ভিয়েতনাম মডেল

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম