বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণ
করোনাকালে বিবেচনাবোধের পরিচয় দিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এমন কিছু অভিযোগ এসেছে, যা থেকে বোঝা যায় এসব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউজিসির নির্দেশনা মানছে না।
শুধু তাই নয়, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তাদের আচরণকে অমানবিকও বলতে হয়।
ভুক্তভোগীদের দায়ের করা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অভিযোগে উঠে আসা তথ্যের মধ্যে রয়েছে- করোনা পরিস্থিতির কারণে যেসব শিক্ষার্থী সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে পারেননি, তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে; আর যারা টাকা দিতে পারেননি তাদের পরীক্ষার ফল আটকে রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি আটকে দেয়া হয়েছে এসব শিক্ষার্থীর পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তি। টিউশন ফি জমা না দিলে আগামী মাস থেকে ক্লাস করতে দেয়া হবে না বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে।
এছাড়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এপ্রিল থেকে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা না দেয়া অথবা আংশিক দেয়ার অভিযোগও আছে। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
করোনা মহামারীর কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ২৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি।
এর ৪ নম্বর নির্দেশনায় অসচ্ছলতায় নিপতিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান সেশনসহ অন্যান্য ফি মওকুফ বা হ্রাস করা অথবা কিস্তিতে প্রদানের সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
আর ৫ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছে ফি আদায়ে মানসিক চাপ না দেয়ার কথা। ৬ নম্বরে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং ৭ নম্বরে কোনো যৌক্তিক কারণে শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে না পারলে অসমাপ্ত কোর্স পরে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে।
অথচ ভুক্তভোগীদের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই ইউজিসির এসব নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কা করছে না।
এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের এ ধরনের আচরণে প্রতীয়মান হয়, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতেও এসব বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্যিক স্বার্থকেই বড় করে দেখছে। অথচ এ সময় সব প্রতিষ্ঠানেরই উচিত সবকিছু সংবেদনশীল ও মানবিক দৃষ্টিতে দেখা।
এটা ঠিক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় নিজেদের আয়ে এবং এর অন্যতম উৎস হল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া বিভিন্ন ফি। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি একরকম ওপেন সিক্রেট। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চ হারে ফি নেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
অভিযোগ আছে, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বাণিজ্যই তাদের আয়ের বড় উৎস। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে ইউজিসি প্রতি বছর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই অঙ্কটি অনেক বড়, যদিও প্রকৃত আয় গোপন করার অভিযোগও রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় কথা হল, করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের অনেকেরই বর্তমানে চাকরি নেই।
অনেকের চাকরি থাকলেও বেতন-ভাতা ঠিকমতো পাচ্ছেন না। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল অনেক অভিভাবকের আয়ের খাত প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে।
এ দুঃসময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে টিউশন ফি’র ব্যাপারে বিবেচনাবোধের পরিচয় দেবে, এটাই কাম্য। ইউজিসিকেও এ ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে হবে।
