ব্যক্তি খাতে ছেড়ে দেয়া বস্ত্রকল: শর্তভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ব্যক্তি খাতে ছেড়ে দেয়া ১৭টি বস্ত্রকলের মালিকরা শর্তভঙ্গ করেছেন নানাভাবে। জানা যায়, বেসরকারি উদ্যোক্তারা ৭৫০ কোটি টাকা ঋণের দায় নিয়ে এসব মিলের মালিকানা গ্রহণ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের ১৪ ডিসেম্বর এসব মিল ব্যক্তি খাতে ছেড়ে দেয়ার সময় শর্ত ছিল- আমদানিকৃত পণ্য, আন্তঃমিলের হিসাবে থাকা অর্থ এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদিসহ ব্যাংক ঋণ ৩৭ কোটি টাকা দিতে হবে সরকারকে। আরও শর্ত ছিল- পাওনা ৩৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে ৬ থেকে ৯ বছরের মধ্যে। ইতিমধ্যে কেটে গেছে প্রায় ৩৮ বছর।
অথচ আজ পর্যন্ত এসব মিলের মালিকরা একটি টাকাও পরিশোধ করেননি। উল্টো শর্তভঙ্গ করে কেউ কেউ অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন মিল। কেউবা বিক্রি করে দিয়েছেন মিলের জমি। কেউ আবার মিলের জমিতে গড়ে তুলেছেন আবাসিক প্লট এবং বহুতল আবাসন ভবন। বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে।
উদ্বেগের বিষয় হল, চুক্তির শর্তভঙ্গ করার পরও কারও বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি আজও। এতে করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড আরও উৎসাহিত হবে বলে মনে করি আমরা। সরকার ওইসব বস্ত্রকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছিল এই উদ্দেশ্যে যে, উদ্যোক্তারা মিলগুলোকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবেন।
ফলে বিরাষ্ট্রীয়করণের কারণে যারা কাজ হারিয়েছেন, তাদের জন্য এবং আরও অনেকের জন্য তৈরি হবে কর্মসংস্থান। তারা অবদান রাখবেন দেশের অর্থনীতিতে। মিল বা মিলের জায়গা বিক্রি করে দেয়া অথবা সেখানে অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে বস্ত্রকলগুলো বিক্রি করা হয়নি। যারা এ কাজ করেছেন, তারা যে শুধু শর্তভঙ্গ করে আইন লঙ্ঘন করেছেন তা নয়, এর মাধ্যমে সরকারের বড় ধরনের ক্ষতি করেছেন। বস্তুত এমন রিপোর্টই করেছে বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের অডিট বিভাগ। বিষয়টিতে অবিলম্বে দৃষ্টি দেয়া উচিত।
আমরা মনে করি, যেহেতু মিলগুলো শর্ত অনুযায়ী পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। মিলগুলোকে পুনরায় সরকারের অধীনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়াও দরকার। পরবর্তী সময়ে কেবল সেসব উদ্যোক্তার হাতেই এসব মিল ছেড়ে দেয়া উচিত, যারা তা ভালোভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম। বস্তুত বিরাষ্ট্রীয়করণের ক্ষেত্রে সবসময় ভালো উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। নয়তো তৈরি হয় লুটপাটের সংস্কৃতি। এ প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করা উচিত। জানা যায়, অডিট রিপোর্টের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনিয়ম ও চুক্তি ভঙ্গকারী এসব কারখানা সরকারের অধীনে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
