ঢাকা-টঙ্গী রেললাইন প্রকল্প
গড়িমসি কার স্বার্থে?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ’ কাজ কবে শেষ হবে- এ প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।
২০১১ সালের শেষদিকে স্বতন্ত্র রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠনের পর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন আধুনিকায়নের পাশাপাশি ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়, যা ২০১২ সালে একনেকে অনুমোদন লাভ করে।
৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নযোগ্য জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজ ২০১৫ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ।
৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে বিশদ নকশা, টেন্ডারিং সার্ভিসসহ মূল কাজের অনেক কিছুই অসম্পন্ন থাকলেও দফায় দফায় প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে ট্রেন ছেড়ে যাওয়া এবং স্টেশনে ট্রেনের প্রবেশ সম্ভব হবে।
বর্তমানে এ স্টেশনের ভেতর ও প্রবেশপথে একাধিক লাইন না থাকায় ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পরপর স্টেশনে ট্রেন প্রবেশ করাতে হয়। স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়তেও একই সময় লাগে। কোনো কারণে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটলে লাইন ক্লিয়ার পাওয়ার সময়সীমা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এর ফলে যাত্রী দুর্ভোগ ও হয়রানির মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। বিগত কয়েক বছরে রেলওয়ের অনেকগুলো প্রকল্প সফলভাবে সমাপ্ত হলেও নির্ধারিত সময়ে ঢাকা-টঙ্গী এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা সফল না হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা এ প্রকল্পের গোড়ায় গলদ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের এ মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পের কোথায় ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে তা দ্রুত চিহ্নিত করে বাস্তবায়নের পথ সুগম করা উচিত।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জনগুরুত্বপূর্ণ ও অর্থনীতির জন্য সুফলদায়ক বিবেচনায় বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও বাস্তবায়নে ধীরগতির জন্য অনেক প্রকল্পেরই উপযোগিতা নষ্ট হয়, উপরন্তু ব্যয় বাড়ে। ২০১২ সালে গৃহীত রেলওয়ের এ প্রকল্পের ব্যয় এরই মধ্যে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়িত হলে রাষ্ট্রের এতগুলো টাকা গচ্চা যেত না, তা বলাই বাহুল্য। বস্তুত প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির ফলে অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অর্থ পকেটস্থ করার সুযোগ তৈরি হয় এবং এতে দুর্নীতির প্রসার ঘটে, যা রোধ করা প্রয়োজন। শুধু আলোচ্য প্রকল্প নয়, অনুমোদন পাওয়া জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো প্রকল্প যাতে সময়মতো বাস্তবায়িত হয়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত।
রেলওয়ের জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রকল্প পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে আপাদমস্তক ঢেলে সাজানো দরকার। তবে সে জন্য সবার আগে দুর্নীতি দূর করতে হবে। দুর্নীতি বজায় রেখে জাতিকে যুগোপযোগী রেল উপহার দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
