শিশুদের জন্য প্রযুক্তি কতটা নিরাপদ
ফাহিম আহমেদ
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে ইউনিসেফ ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিশুর জন্য নিরাপদ ইন্টারনেটবিষয়ক একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী ১১ হাজার ৮২১ জন ছেলেমেয়ে এ জরিপে অংশগ্রহণ করেছিল। জরিপের ফলাফলের দিকে একটু আলোকপাত করা যাক।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৩ শতাংশ শিশু-কিশোর সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়রানির শিকার হয়। এর মধ্যে একাধিকবার হয়রানির শিকার হয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং এসব কারণে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। ৮১ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত সময় দেয় এবং ৮০ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো হয়রানির শিকার হয়নি।
জরিপটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশে এখনও শিশু-কিশোরদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ ইন্টারনেট গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। প্রযুক্তির এ যুগে শিশু-কিশোরদের প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখা উচিত নয়। তাই বলে প্রযুক্তিতে অবাধ বিচরণের সুযোগ প্রদান করাও ঠিক নয়। দেশে, বিশেষ করে রাজধানীতে খেলাধুলার পরিসর বা খেলার মাঠ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ফলে শিশু-কিশোরদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রযুক্তিতে অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা প্রযুক্তি কোনো কিছু জানা বা শেখার জন্য ব্যবহার করছে কিনা সে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে অভিভাবকদের। অবাধ বিচরণের সুযোগ থাকলে শিশু না বুঝে ডার্ক ওয়েবে ঢুকে পড়তে পারে। তাই বাবা-মা কর্মক্ষেত্রে থাকলেও সন্তান কখন কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, ইন্টারনেট কখন ব্যবহার করছে বা কতক্ষণ করছে এসব বিষয়ে অভিভাবকদের অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে খোঁজখবর রাখতে হবে।
আমরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করব, তবে লক্ষ রাখতে হবে প্রযুক্তি যেন আমাদের ব্যবহার না করে। বিশেষ করে শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারে অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। ব্যবহারের শুরু থেকে সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে এটি শুধু খেলার মাধ্যম নয়, বরং জানার মাধ্যমও। এজন্য অভিভাবকদেরও শিশুদের সামনে প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। দুই বছরের কমবয়সী শিশুদের কোনোভাবেই প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে দেয়া উচিত নয়। তাদের সামনে প্রযুক্তি পণ্য উন্মোচন করাও উচিত নয়। শিশুর বয়স তিন থেকে পাঁচ বছর হলে দৈনিক সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করতে দেয়া যেতে পারে।
উন্নত দেশে সন্তানদের ইন্টারনেট ব্যবহারের গতিবিধি লক্ষ রাখার জন্য বেশকিছু প্রযুক্তি বা অ্যাপস রয়েছে। শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করে এমন দুটি দাতব্য সংস্থা হল চাইল্ড লাইন ও এনএসপিসিসি। এসব সংস্থা শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট জগৎ তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এমন সংস্থার অভাব রয়েছে।
ডিজিটাল বিশ্ব গড়ে তুলতে গিয়ে যাতে শিশুর জীবন বিপদের দিকে ঠেলে দেয়া না হয় সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। নাগরিক জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা ইন্টারনেট ব্যবহার যাতে নিজের সন্তানের জীবন বিপন্ন করে তুলতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে অভিভাবকদেরই।
ফাহিম আহমেদ : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
