পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ: ত্রুটি মেরামতে কালক্ষেপণ কাম্য নয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হলেও এর রেল সংযোগের কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। ফলে সেতুর উদ্বোধনী দিনে এর উপর দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে পরিস্থিতি দাঁড়াবে অনেকটা ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’।
এমনটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনেই সেতুর উপর দিয়ে রেল চলাচল করবে, এটাই সবার প্রত্যাশা। বস্তুত এ অনিশ্চয়তা সৃষ্টির কারণ মূল সেতুর দুই প্রান্তে হরাইজন্টাল ও ভার্টিক্যাল দু’দিকেই ত্রুটি ধরা পড়ার পর লিংক সংযোগ প্রকল্পের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ এলাকার কাজ ৪ মাস ধরে বন্ধ থাকা।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, এ ত্রুটি সংশোধন না করে পদ্মা সেতু ও রেল কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দায়ী করে এ ব্যাপারে অহেতুক কালক্ষেপণ করছে। এতে কেবল সময়ক্ষেপণই হচ্ছে না, সময় দীর্ঘায়িত হলে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্রুটি বা সমস্যাটি ততটা বড় নয়, কিন্তু একে অনেক বড় করে দেখা হচ্ছে। একপক্ষ অন্যপক্ষকে ছাড় দিতে চাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কাজ করছে ‘ইগো’।
আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে কারও কোনো ধরনের ইগো থাকা উচিত নয়। ত্রুটির জন্য যারাই দায়ী হোক না কেন, কাজটি সময়মতো সম্পন্ন করাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয়। সে জন্য সমস্যাটির সমাধানের যথাযথ পথ বের করতে হবে দ্রুত। জানা গেছে, রেল ও বুয়েট প্যানেল সমন্বয়ে নকশা নির্ভুল করে তা জমা দেয়া হলেও রেলের কোনো প্রস্তাবই গ্রহণ করছে না সেতু কর্তৃপক্ষ।
অথচ বুয়েট প্যানেল প্রধানসহ তিন অধ্যাপক সর্বশেষ যে নকশা দিয়েছেন, সেটিকে অত্যন্ত মানসম্পন্ন বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা সেতু রেল লিংক সংযোগ প্রকল্প বিশেষজ্ঞ প্যানেল সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামছুল হক যুগান্তরকে বলেছেন, ত্রুটি সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে চূড়ান্তভাবে বৈঠকে বসা উচিত।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবে রূপ নেয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর এর উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ার কথা। তাই এ সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ত্রুটি সমাধানের বিষয়ে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। ভুলে গেলে চলবে না, পদ্মা শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের সক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ সেতু নির্মাণে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে এসেছে নানা বাধা।
দুর্নীতির কথিত অভিযোগ তুলে দাতা সংস্থাগুলো এ প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর অদম্য ইচ্ছায় নিজেদের উদ্যোগ ও অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী পদক্ষেপ বর্তমান বিশ্বে আমাদের সক্ষমতার নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে। এ কারণে পদ্মা সেতু আমাদের কাছে স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। তাছাড়া দেশের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কাজেই নির্ধারিত সময়ে পদ্মা সেতু চালু না হলে অথবা এর উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল না করলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। সংশ্লিষ্ট সবার সর্বাত্মক চেষ্টায় পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ত্রুটি দ্রুত মেরামত করা সম্ভব হবে, এটাই প্রত্যাশা।
