স্মরণ
বাবাকে প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করি
বেনজির চৌধুরী আইভি
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজ ২ ফেব্রুয়ারি আমার বাবা মিজানুর রহমান চৌধুরীর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ সালের এই দিনে তিনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন। আমরা বাবাকে প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করি। তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদ কিংবা প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না; তিনি একাধারে ছিলেন একজন পিতা, একজন স্বামী, একজন শ্বশুর, একজন দাদা, একজন নানা ও বন্ধু।
রাজনীতিবিদ হিসাবে শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও পারিবারিক পরিমণ্ডলে তিনি সম্পূর্ণভাবে সব দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আমি তার মেজ ছেলের বউ হিসাবে নিজেকে ধন্য মনে করি। তবে তিনি আমার বাবা। শ্বশুর পরিচয়টি না দিয়ে আমি সবসময় তাকে বাবার পরিচয়েই দেখতে চেয়েছি এবং ভবিষ্যতেও সেই পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই।
এর একাধিক কারণ আছে, যা অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবে না। আমি সবসময় শুনে এসেছি অনেকে বাবাকে ‘কাণ্ডারি’ বলতেন। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সংকটকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলেই হয়তো তাকে এ নামে ডাকা হতো।
ছেলের বউ হিসাবে এই পরিবারে আসার পর আমি তাকে ৩৩ বছর খুব কাছে থেকে দেখেছি। এ সময়ে মনে হয়েছে তিনি সত্যিকার অর্থেই কাণ্ডারি। তাকে নিয়ে আমার একটা দুঃখ আছে। আমি নিজের কাছেই প্রশ্ন করি, মৃত্যুর পর আমরা কি তার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পেরেছি?
আমি দেখেছি বাবা ১৯৯৬ সালে নিজের জন্য কিছু না করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে সহযোগিতা করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু চেষ্টা করেননি। এইচএম এরশাদকে জেল থেকে মুক্ত করেছিলেন। বিবেকের কাছে হার মানেননি।
কারণ তার কাছে জাতীয় পার্টি একটা আমানত ছিল। তখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে সহযোগিতা করে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করাতে পেরে বাবার আশা পূর্ণ হয়েছিল। কিন্তু আমাদের যেটা দুঃখ সেটা হলো-কত মানুষের জন্য কত কিছু হয়, আমার বাবার নামে চাঁদপুর, ঢাকা কিংবা বাংলাদেশের কোথাও একটা রাস্তার নামকরণ পর্যন্ত হলো না!
বাবা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জেল খেটেছেন, ৬ দফার জন্য আন্দোলন করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কেবিনেট মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন। জীবনের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং একজন ‘আওয়ামী লীগার’ হয়েই তার মৃত্যু হয়।
তার কোনো সন্তান এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা নেননি। বাবা সেটা পছন্দ করতেন না। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকার আমাদের ওষুধ (পাইওনিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস) কারখানা জ্বালিয়ে দেয়।
বাড়িতে বোমা ফেলে। তারা আমাদের সর্বস্বান্ত করে ছাড়ে। তারপর কতই না চড়াই-উতরাই পার করতে হয়েছে আমাদের! তারপরও কিছুই চাইনি। শুধু চেয়েছি বাবার সম্মান।
বেনজির চৌধুরী আইভি : প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর মেজ ছেলে আমানুল্লাহ মিজান রাজুর স্ত্রী
