Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সচেতনতাই পারে আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে

Icon

আর কে চৌধুরী

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সচেতনতাই পারে আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে

যান্ত্রিক সভ্যতার যত বিকাশ ঘটছে, মানুষ ততই ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার ঘেরাটোপে আটকা পড়ছে। বাড়ছে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব। জীবন-জীবিকার পেছনে ছোটা বাবা-মা’র কাছ থেকে পর্যাপ্ত সময় না পেয়ে সন্তানের মনোজগতে হতাশা তৈরি হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় মানুষ মনের ভাব আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে প্রায় অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করছে।

এ স্বাধীনতার অপরিণামদর্শী ব্যবহারে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা সহজেই নানা জটিল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। এ সম্পর্কের জের ধরে কোনো কোনো সময় ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকারও হচ্ছে অনেকে। জীবন-জীবিকার সংগ্রামও মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়াচ্ছে। বিশেষত করোনাকালে এ সমস্যা অনেক বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব কারণে অনেকেই আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর পথ বেছে নিচ্ছে।

করোনা মহামারিতে দুনিয়াজুড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। আয় কমেছে এমন মানুষের সংখ্যাও অগুনতি। আর্থিক চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে দুনিয়াজুড়ে বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখালেও অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকানো যায়নি শত চেষ্টা করেও। পরিণতিতে মহামারির সময় দেশেও আত্মহত্যা বেড়েছে।

আত্মহত্যা প্রবণতার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হতাশা ও বিষণ্নতা। না পাওয়ার কষ্ট এবং প্রতারিত হওয়ার অসহ্য যন্ত্রণাও আত্মহননের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। হতাশা নামের মানসিক অসুস্থতা আমাদের পারিবারিক ও সমাজ জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। বিশেষত কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে হতাশা যেভাবে বাড়ছে তা উদ্বেগজনক।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় থাকতে হবে পারিবারিক উদ্যোগ। বেকারত্ব নিরসনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের প্রয়োজনও অনস্বীকার্য। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের বিষয়েও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

দেশে আত্মহত্যা রোধে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ ও প্রয়াস থাকলেও এ প্রবণতা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। তবে প্রচেষ্টাগুলো আরও বেশি মনোযোগ পাওয়ার দাবি রাখে। পাশাপাশি অবকাশ রাখে নতুন চিন্তাভাবনার। শিল্পায়নের সঙ্গে নগরায়ণ, সেই সঙ্গে প্রযুক্তিনির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় সমাজে নানা জটিল পরিবর্তন ঘটছে।

আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক মূল্যবোধগুলো দিন দিন হালকা হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সামাজিকীকরণ, শক্তিশালী ও কার্যকর সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধগুলো ধারণ ও লালন, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের সংহতি স্থাপন করা সম্ভব হলে তা হবে আত্মহত্যা নিরসনের মূল হাতিয়ার।

আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা

 

যান্ত্রিক সভ্যতার যত বিকাশ ঘটছে মানুষ ততই ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার ঘেরাটোপে আটকা পড়ছে। বাড়ছে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব। জীবন-জীবিকার পেছনে ছোটা বাবা-মা’র কাছ থেকে পর্যাপ্ত সময় না পেয়ে সন্তানের মনোজগতে হতাশা তৈরি হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম