Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অনন্তলোকে কবরী

তাকে ছাড়া বাংলা সিনেমার ইতিহাস হয় না

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনন্তলোকে কবরী

করোনা শেষ পর্যন্ত কবরীকেও নিয়ে গেল। কিছু নাম আছে, যেগুলো আর বিশেষ্য পদ থাকেনি, বিশেষণ হয়ে গেছে। কবরী তেমনই একটি নাম। অপরূপ দৈহিক সৌন্দর্যের সঙ্গে অভিনয় নৈপুণ্য মিলেমিশে এমন এক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন কবরী যে, তার মৃত্যুতে শোকাহত হয়নি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার। এই বাংলায় অভিনয় জগতে এসেছেন অনেক অভিনেত্রী; কিন্তু ‘মিষ্টি মেয়ে’ খেতাব পেয়েছেন একজনই এবং তিনি হলেন কবরী। এই মিষ্টতা শুধু তার মুখাবয়বেই নয়, প্রকাশিত হয়েছিল তার অভিনয়ে। তার অভিনীত চলচ্চিত্র দেখে আবেগে আপ্লুত হয়নি, সিনেমার এমন দর্শক নেই বললেই চলে। তাই এ করোনাকালেও মৃত্যু যখন একটি সংখ্যা মাত্র, তখন কবরীর মৃত্যু শুধু একটি সংখ্যা হিসাবে মৃত্যুতালিকায় যুক্ত হয়নি, তিনি বেদনাহত করেছেন কোটি কোটি মানুষকে।

সেই ১৯৬৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ‘সুতরাং’ ছায়াছবির মাধ্যমে তিনি সিনেমা জগতে প্রবেশ করেছিলেন যখন, তখনই দর্শক ধরে নিয়েছিল এই কিশোরী যাবে বহুদূর। তিনি গিয়েছেনও তাই। একের পর এক ছায়াছবিতে মনোহরণকারী অভিনয় করে তিনি হয়ে উঠেছেন সাধারণের মাঝে বিশিষ্ট। ‘আবির্ভাব’, ‘রংবাজ’, ‘দীপ নেভে নাই, ‘বাঁশরি’-এমন অনেক ছবিতে শুধু তাকে দেখার জন্যই দর্শক বারবার ছুটে গেছেন সিনেমা হলে। তার ঠোঁটে গীত হওয়া ‘সে যে কেন এলো না, কিছু ভালো লাগে না’-এই গান এক সময় মুখে মুখে ফিরেছে সিনেমা দর্শকদের। এতটাই ছিল তার জনপ্রিয়তা যে, এভাবে বলা যায়: বাংলাদেশে দুধরনের মানুষ আছে-এক. যারা কবরী অভিনীত ছবি দেখেছেন আর দুই. যারা দেখেননি। ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক নির্মিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি তার ক্যারিয়ারে যুক্ত করেছিলেন নতুন মাত্রা। একজন সফল চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। কবরী নিছকই একজন অভিনেত্রী বা চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন না, তার ছিল একটি রাজনৈতিক মানস। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরি করেছিলেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ব্যানারে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এক কথায় বলা যায়, তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার এক অনন্যসাধারণ নারী। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, যতদিন থাকবে বংলা চলচ্চিত্র, ততদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন কবরী। ডেনমার্কের যুবরাজ ছাড়া যেমন ‘হ্যামলেট’ নাটক মঞ্চস্থ করা যায় না, তেমনি তাকে বাদ দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস লেখা একেবারেই অসম্ভব। তার বিদেহী আত্মার প্রতি রইল আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

কবরী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম