পাহাড় কেটে ইটভাটা: এসব দেখার কোনো কর্তৃপক্ষ আছে কি?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বন ও পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন অবৈধভাবে ফসলি জমি ও পাহাড় কাটা হলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো আইনি ব্যবস্থা। ইটভাটাগুলোর কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে শত শত একর ফসলি জমি ও সবুজ পাহাড়। বান্দরবানের আলীকদমের ফসলি জমি ও পাহাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ার সচিত্র একটি প্রতিবেদন গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে।
এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক দিয়ে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার কাজ দিনে সীমিত হলেও রাতে চলে বেপরোয়া গতিতে। কেবল আলীকদমেই নয়, সারা দেশেই রয়েছে অনেক অবৈধ ইটভাটা। অবৈধ ইটভাটাগুলোর কারণে জনদুর্ভোগ কতটা চরম আকার ধারণ করেছে, সে খবর বারবার গণমাধ্যমে এলেও এগুলোর বিরুদ্ধে যাদের অভিযান পরিচালনা করার কথা, তাদের নীরবতার কারণ বোধগম্য নয়।
বিভিন্ন সময়ে আমরা লক্ষ করেছি, এ ধরনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বলে থাকে-অভিযান পরিচালনা করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, লোকদেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করা হলেও অবৈধ ইটভাটা রয়ে যায় বহাল তবিয়তে। আবার কখনো কখনো কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতও দেখিয়ে থাকে।
বস্তুত সারা দেশে অবৈধ ইটভাটার অস্তিত্ব দেখে বোঝার উপায় নেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয় কি না। এক্ষেত্রে আদৌ কোনো কর্তৃপক্ষ আছে কি না। কেননা আবাসিক এলাকার ইটভাটার বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও ফল পাননি এলাকাবাসী, এমন অভিযোগও পাওয়া যায়।
আবাদি জমিতে, এমনকি তিন ফসলি জমিতেও ইটভাটা নির্মাণ করা হয়। এসব কি দেখার কেউ নেই? ইটভাটার কারণে অবিরত নির্গত কালোধোঁয়ার সঙ্গে ছাই ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকাগুলোয়; আশপাশের সবকিছুই ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন থাকে। ইটভাটার কারণে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বাড়ছে; বন উজাড় হচ্ছে। পাহাড় কাটার ফলেও ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি।
তা ছাড়া আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি যেভাবে অপসারণ করা হচ্ছে, একসময় তা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ইটভাটার নির্গত কালোধোঁয়ায় পরিবেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে এর প্রভাবে ফসল ও ফলনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হবে।
কাজেই লোকদেখানো অভিযান নয়, অবৈধ ইটভাটাসহ পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। কর্তৃপক্ষ যে আছে, তার অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে হবে।
