Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কেমন হওয়া উচিত

Icon

হাসান হামিদ

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কেমন হওয়া উচিত

দেশের সংবিধানে সামাজিক নিরাপত্তা মানবাধিকার হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে দেশে প্রথমবারের মতো বয়স্কভাতা এবং ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীসহ নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এর আওতা আরও বাড়ানো হয়।

জানতে পেরেছি, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ১২৫টি কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয় পেনশন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং বা ভিজিএফে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার শহর ও গ্রামের দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে। উদ্দেশ্যটি অত্যন্ত মহৎ।

তবে আমরা হতাশ হই যখন এ কর্মসূচি থেকে প্রকৃত দুস্থ ও গরিব মানুষের বাদ পড়ার ঘটনা ঘটে। আবার কখনো এ কর্মসূচিতে বরাদ্দের পরিমাণ কমে। এ দুটি কারণে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, তা প্রায় নিশ্চিত বলা যায়। চলতি বছরের শুরুর দিকে পত্রিকায় পড়েছিলাম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যে মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে, সেই তালিকায় নয়ছয়ের একাধিক খবর।

সমাজের দুস্থ, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধ মানুষকে সহায়তা করার জন্য সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যে মাসিক ভাতা চালু করেছিল, তা প্রশংসিত হয় সবার কাছে। কিন্তু সরকারি আরও অনেক কর্মসূচির মতো এ ক্ষেত্রেও যোগ্য অনেকে বাদ পড়ে যায়। দেখা যায়, যারা ভাতা পাচ্ছে, তারা কোনোভাবেই যোগ্য নয়।

খবরের কাগজে পড়লাম, এ বছরের শুরুতে টিআর, কাবিখাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে খাদ্যশস্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩১ লাখ ৩৭ হাজার টন নির্ধারণ করা হলেও সম্প্রতি সংশোধিত বাজেটে তা ২৪ লাখ ৫৫ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে। করোনার কারণে মানুষ কাজ হারিয়েছে, হারাচ্ছে। তাহলে বরাদ্দ কমানোর কারণ কী?

আরেকটি ব্যাপার হলো, সাধারণত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নগর-দরিদ্রদের লক্ষ্য করে প্রণীত হয় না, এর প্রধান লক্ষ্য হলো গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ। জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে বলা হয়েছে, বিদ্যমান কর্মসূচিতে নগরের দরিদ্ররা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে তাদের জন্যও পৃথক কর্মসূচি থাকা দরকার। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রণীত হয় শুধু দরিদ্রদের কথা মাথায় রেখে। অরক্ষিত মানুষদের কথা বিবেচনা করা হয় না।

মহামারির মতো দুর্যোগের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয় না। অথচ আমাদের দেশে বর্তমান অবস্থায় শহরের দরিদ্র, অরক্ষিত ও দারিদ্র্যসীমার উপরে বাস করা মানুষের আয় নেই। করোনার প্রভাবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কাজ হারানোর কারণে যেসব মানুষ কোনোরকমে দারিদ্র্যসীমার উপরে থাকত, তাদের একটি অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৭৪ শতাংশ পরিবারের আয় কমে গেছে।

দেশে নিত্যপণ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টিকে থাকা এখন অনেকটাই কঠিন। এ অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা না কমিয়ে বরং আরও বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি এ কর্মসূচিকে উৎপাদনমুখী ও মানবসম্পদ উন্নয়নমুখী করা দরকার।

কাউকে প্রতি মাসে সাহায্য করার চেয়ে দক্ষতা বাড়ানোর বন্দোবস্ত করা গেলে ভালো হয়। নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সমাজের দরিদ্র শ্রেণিকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা যায়। এভাবে কাজ করলে একদিন দেখা যাবে তাদের আর সাহায্যের দরকার হবে না। আর এভাবেই একদিন গড়ে উঠবে সামাজিক নিরাপত্তার সঠিক বেষ্টনী।

হাসান হামিদ : প্রাবন্ধিক

 

হাসান হামিদ করোনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম