বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ
প্রকল্পের ধীরগতি হতাশাজনক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ২৮২টি বধ্যভূমি সংরক্ষণের পাশাপাশি সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য তিন বছর আগে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয় সরকার। চলতি মাসেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ২৮০টির মধ্যে ১৭টির কাজ চলছে। উল্লিখিত প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। শুরু থেকে যথাযথ তদারকি থাকলে প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন হতাশাজনক চিত্র যে দেখতে হতো না, তা বলাই বাহুল্য। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণ জটিলতাই এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত যেসব কারণে দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হয়, জমি নিয়ে জটিলতা তার একটি।
তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরু থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে যারা কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। এছাড়া যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা এ কাজে কতটা অভিজ্ঞ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন সেসবও খতিয়ে দেখতে হবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতাবিরোধী স্থানীয় রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে জীবন দিয়েছেন এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ। ঘাতকদের নির্মমতা থেকে রক্ষা পায়নি নারী ও শিশুরাও। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দেশপ্রেমিক মানুষকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা বধ্যভূমিতে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই শহিদদের মধ্যে ছিলেন বহু বীর মুক্তিযোদ্ধাও।
তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে গণকবর দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সেই মহান স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে কয়েক বছর আগে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে এসব গণকবর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সংরক্ষণের জন্য বহুদিন ধরেই বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়ার পর সবাই আশা করেছিল, বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের বিষয়টি এবার নিশ্চিত হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের বর্তমান চিত্র পর্যবেক্ষণে সংশ্লিষ্টরা হতাশ হবেন, এটাই স্বাভাবিক।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সব ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশের মানুষের বিশেষ আবেগ জড়িত। কাজেই কেন বিপুলসংখ্যক বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ সময়মতো শুরু করা গেল না এবং যেসব বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মাত্র কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোর অগ্রগতি সন্তাষজনক নয়, তা জনগণকে জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এসব বিষয়ে যে ব্যাখ্যা তুলে ধরা হচ্ছে, সেসব খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আগামীতে যাতে নির্ধারিত সময়ে বাকি কাজ সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করতে নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।
একইসঙ্গে এ প্রকল্পে কাজের মান নিয়ে যাতে কোনোরকম প্রশ্ন না ওঠে তা নিশ্চিত করার জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, কোনো প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা না গেলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বেই। সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশে আগে যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলোর অধিকাংশ এখনো বহাল রয়েছে, যা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। কোনো প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে যথাযথ তদারকির পাশাপাশি বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
