Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

পণ্য রপ্তানিতে জটিলতা

সমন্বিত উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পণ্য রপ্তানিতে জটিলতা

ফাইল ছবি

করোনার কারণে দেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বিষয়টি বহুল আলোচিত। জানা গেছে, রপ্তানি পণ্য পরিবহণে কনটেইনার সংকট ও জাহাজে চাহিদা অনুযায়ী কনটেইনার পরিবহণের বুকিং না মেলায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। দ্রুত এ সংকটের সমাধান না হলে রপ্তানিকারকদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

করোনার কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বর্তমানে বিদেশি ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছাতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক সপ্তাহ বেশি লাগছে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে গত বছরের শেষদিকে বৈশ্বিক বাণিজ্যে কিছুটা গতি এলেও সৃষ্টি হয়েছে নানা ধরনের সংকট। লক্ষ করা গেছে, বড় অর্থনীতির কোনো কোনো দেশ থেকে রপ্তানি বাড়লেও কমেছে আমদানি। এর প্রভাব পড়ে সমুদ্রপথের বাণিজ্যে। যেহেতু সম্প্রতি বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান বেড়ে চলেছে, এ অবস্থায় সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহণে খরচও বেড়েছে।

সম্প্রতি ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন বন্দরে জট তৈরি হয়েছে। তাতে সেসব দেশের বন্দর থেকে কনটেইনার খালি হয়ে আসতে সময় লাগছে। চীনের আমদানি কমে রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় খালি কনটেইনারের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক নৌপথে জাহাজ ভাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় অনেক শিপিং কোম্পানির কনটেইনার পরিবহণ ক্ষমতা কমেছে। বস্তুত এরই প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশের ডিপোতে। জায়গার অভাবে ডিপোর বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে পণ্য বোঝাই অনেক কাভার্ড ভ্যান।

বস্তুত অনেক চালান একসঙ্গে আটকে যাওয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বিপাকে পড়েছেন। যথাসময়ে পণ্য পাঠাতে না পারায় অনেকের রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সিঙ্গাপুর ও কলম্বো ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে মাদার ভেসেলের আগমন কমে যাওযায় ওই দুই পোর্টে কনটেইনার জটের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যেসব কনটেইনারে পণ্য রপ্তানি করা হয়, সেগুলোর দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট। সাধারণত ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কনটেইনারে পণ্য আমদানি করা হয় । ফলে আমদানি করা পণ্যের কনটেইনারগুলো সমস্যা সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। আগে সিঙ্গাপুর ও কলম্বোসহ বিভিন্ন বন্দর থেকে সহজে কনটেইনার সংগ্রহ করা যেত। অনেক কনটেইনার বিভিন্ন বন্দরে আটকে যাওয়ায় এখন সময় মতো প্রয়োজনীয়সংখ্যক কনটেইনার সংগ্রহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

করোনার কারণে বিভিন্ন দেশের রপ্তানিকারক ও উদ্যোক্তারা যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কতদিনে তা কাটিয়ে উঠতে পারবেন, বলা মুশকিল। ধারণা করা যায়, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। উল্লিখিত পরিস্থিতি যে কোনো সময় আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে, এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। সবদিক বিবেচনা করে দেশের রপ্তানিকারকদের ক্ষতি যাতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা যায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু উল্লিখিত সমস্যার সঙ্গে বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতি সরাসরি জড়িত; তাই সংকটের নেপথ্যের কারণগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। উল্লিখিত সমস্যার সমাধানে রপ্তানিকারক, বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার ও জাহাজ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, সমন্বিত উদ্যোগ অব্যাহত না থাকলে আগামীতে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

পণ্য রপ্তানি জটিলতা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম