চামড়ার নির্ধারিত মূল্য উপেক্ষিত
এই চিত্র কি ফি বছরই দেখতে হবে?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চামড়া দেশের এক অন্যতম রপ্তানি খাত। এ খাত থেকে আয় হয় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। উল্লেখ্য, চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম কুরবানির ঈদ। এ সময় মোট চামড়ার ৮০ শতাংশ সংগৃহীত হয়ে থাকে। অথচ গত কয়েক বছর ধরে কুরবানির চামড়া নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা সংকট। গত বছর তো চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অনেকে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলে অথবা রাস্তায় ফেলে দেয়। কুরবানির চামড়া নিয়ে এবারও তৈরি হয়েছে নানা সংকট। ট্যানারি ও আড়তদারদের কারসাজিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া কুরবানির পশুর চামড়ার মূল্য কার্যকর হয়নি। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করা হয় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। প্রকৃত মূল্য না পেয়ে রাজধানীর পাইকারি বাজার পোস্তার আড়তের সামনে, বগুড়ার রাস্তায় ও করোতোয়া নদীসহ বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয় চামড়া। সক্রিয় সিন্ডিকেটে পোস্তাসহ সারা দেশে জড়িয়ে পড়ে আড়তের মালিকরা। ওদিকে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপকরণ লবণ নিয়ে তৈরি হয় আরেক ধরনের সংকট। লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বস্তাপ্রতি এর দাম বাড়ানো হয় পাঁচশ টাকা। লবণের এমন সংকটে অনেক আড়তদার ঈদের রাতে চামড়া কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় চামড়ার আরও দরপতন ঘটে। লবণ সংকটের কারণে পাঁচ থেকে দশ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন।
এ বছর কুরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে কেন্দ্রীয় যৌথ সমন্বয়ক কমিটি, জাতীয় ও বিভাগীয় মনিটরিং টিম গঠন করেছিল। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য ছিল কন্ট্রোল সেল। এতসব আয়োজনের পরও চামড়ার দাম নিয়ে কেন কারসাজি হলো, তা এক প্রশ্ন বটে। চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কি তবে সরকারের চেয়েও শক্তিশালী গোষ্ঠী? লবণ সংকটেরই বা যুক্তি কী? আমরা লক্ষ করে আসছি, কোনো একটি ক্ষেত্রে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার সুযোগ থাকলেই একশ্রেণির ব্যবসায়ী সেই সুযোগের ব্যবহার করতে দেরি করে না। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপকরণ লবণ, তাই লবণ সিন্ডিকেট সুযোগটি গ্রহণ করেছে। ব্যবসা ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কবে শেষ হবে, এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। তবে সরকার, বিশেষত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সদিচ্ছা পোষণ করলেই তা যে সম্ভব, এটা বোঝা কঠিন কিছু নয়।
কুরবানির চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না হলে অনেক পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমত, সাধারণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন; দ্বিতীয়ত, ক্ষতিগ্রস্ত হন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা, যারা চামড়ার টাকার প্রকৃত হকদার। তারা হলেন দেশের গরিব-দুঃখী মানুষ। সর্বোপরি প্রকৃত মূল্য না পাওয়ার কারণে চামড়ার একটি বড় অংশ নষ্ট করে ফেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামগ্রিকভাবে চামড়া শিল্প তথা এই শিল্পের রপ্তানির খাত। আমরা মনে করি, চামড়া নিয়ে সংকট তৈরি হলে তা চামড়া শিল্পের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই আগামীতে কুরবানির চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের সার্বিক সুব্যবস্থাপনা। এ দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, দায়িত্ব রয়েছে ট্যানারির মালিক, আড়তদার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদেরও।
