Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

নানা চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি

সক্ষমতা অর্জন ও করোনা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নানা চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি

১৫ মাস ধরে চলমান করোনা সংকট দেশের অর্থনীতিতে যে প্রভাব ফেলেছে, তা উদ্বেগজনক। বস্তুত করোনা মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ও গতিপ্রবাহই শুধু আটকে দেয়নি, ক্ষতিগ্রস্ত করেছে দেশের অর্থনীতিকেও। বাধাগ্রস্ত করেছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সামগ্রিক কার্যক্রম। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের প্রভাবে চলতি অর্থবছরেই বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে দেশের অর্থনীতিকে। এই অর্থবছরে সরবরাহ চেইনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে বেড়ে যেতে পারে বিভিন্ন পণ্যের দাম। প্রকৃতপক্ষে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দেশে টাকার প্রবাহ ও পণ্যের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যেতে পারে। পাশাপাশি বাড়তে পারে দেশে-বিদেশে ঋণের সুদের হার, আর তাই স্বাভাবিক কারণেই বৃদ্ধি পাবে বৈদেশিক দেনার পরিমাণ। এ ছাড়া কমতে পারে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধির হার। অবশ্য চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে উপরের আশঙ্কার কথা উল্লেখ থাকলেও এতে বেশকিছু সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ কমতে পারে, বাড়তে পারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ফলে আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা আরও বেড়ে যাবে। করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতেও।

করোনার কারণে দেশের অর্থনীতি যেসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে, সেগুলো থেকে উত্তরণের উপায় কী? মুদ্রানীতিতেই বলা হয়েছে, অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে হবে। এজন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে এগোতে হবে। বাড়াতে হবে সব পক্ষের সক্ষমতা। আমরাও মনে করি, অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জনের বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, দেশে চলমান টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করে দ্রুতই এর আওতা বাড়াতে হবে। টিকার সঙ্গে অর্থনীতির চাকার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানাসহ সব ধরনের কারখানা খুলে দিয়ে সেগুলোর স্বাভাবিক ও বিরতিহীন কর্মকাণ্ড নিশ্চিত করতে হলে করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। আর সেটা করতে হলে প্রয়োজন অধিকসংখ্যক মানুষকে টিকাদান। বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীও প্রায় একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করতে হবে। লকডাউন দিয়ে শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখলে নতুন বিনিয়োগ তো হবেই না, যেগুলো রয়েছে সেগুলোও ধরে রাখা যাবে না। তিনি আরও বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট নিরসনে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও গার্মেন্টসহ বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার ফলে কনটেইনার খালাস করতে কেউ যেতে পারেনি। এর ফলে আবার জট লেগে গেছে। এ ধরনের সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে।

দেশের অর্থনীতির সামনে এক কঠিন বাস্তবতা অপেক্ষা করছে বলা যায়। অবশ্য আইএমএফ আভাস দিয়েছে, ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বেশির ভাগ দেশের বেশির ভাগ মানুষ টিকার আওতায় আসবে, ফলে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। তাই যদি হয়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে তাল রেখে আমাদের অর্থনীতিরও দুর্দিন কাটবে। আমরা আশা করব, আইএমএফের এই পূর্বাভাস বাস্তব রূপ লাভ করবে। অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণের সম্পর্কটিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সব দেশ। আমাদেরও তা-ই করতে হবে।

অর্থনীতি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম