টিকা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা
মজুত স্বল্পতা কাটাতে হবে দ্রুত
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গত ১ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, ৭ থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে সরকার এক কোটি টিকা দিতে চায়।
সরকারের হাতে আছে সোয়া কোটি টিকা। আরও এক কোটি টিকা এ মাসের মধ্যেই আসবে। জানা যায়, ৭ থেকে ১৪ আগস্ট সারা দেশে গণটিকা কর্মসূচির আওতায় এক কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
কিন্তু হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গণটিকাদান কর্মসূচি সীমিত করে ৭ দিনের পরিবর্তে আপাতত একদিন এ কর্মসূচি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রকৃতপক্ষে সরকারের কাছে বর্তমানে টিকার মজুত আছে ৮৯ লাখ ডোজ। এ থেকে ৭ আগস্ট প্রথম ডোজ হিসাবে প্রায় ৪৬ লাখ টিকা দেওয়া হবে।
বাকি টিকাগুলো বর্তমানে যেভাবে ও যেসব স্থানে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে ব্যবহার করা হবে। এরপর নতুন করে টিকা এলে কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যুগান্তরকে বলেছেন, সবকিছুই নির্ভর করছে সময়মতো টিকা পাওয়ার ওপর। তার মানে, গণটিকা কার্যক্রম আবারও এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল। বলা যায়, বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনার কর্মসূচিটি শুরুতেই হোঁচট খেল। এ পরিস্থিতি মানুষকে আশাহত ও শঙ্কিত করে তুলবে, সন্দেহ নেই।
বড় আকারে গণটিকাদান কর্মসূচির ঘোষণা মানুষকে করোনা মোকাবিলার ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, যত বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে তা তত বেশি ভূমিকা রাখবে। কারণ এর মাধ্যমে তৈরি হবে হার্ড ইমিউনিটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কোনো দেশে টিকাদানের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করতে হলে অবশ্যই ৮০ শতাংশ মানুষকে পূর্ণ ডোজ টিকার আওতায় আনতে হবে। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব এ লক্ষ্য পূরণ করতে হবে আমাদের। অন্যথায়, বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে দেশ।
গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বকে রীতিমতো ওলটপালট করে দিচ্ছে করোনা নামের ভাইরাস। এ মহামারিতে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ পড়েছে আর্থিক সংকটে। মৃত্যু, শোক আর সংকটের মধ্যে কাটিয়েছে মানুষ। বড় ধরনের সংকটে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এ প্রেক্ষাপটে জীবন ও জীবিকা দুটির সুরক্ষার জন্যই বড় প্রয়োজন দেশের সিংহভাগ মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনা। করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশে চলছে কঠোর লকডাউন বা বিধিনিষেধ। আগামী ১১ আগস্ট থেকে এ বিধিনিষেধ শিথিল করার কথা। এ দিন থেকে গণপরিবহণ, দোকানপাট, শপিংমল, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়ার কথা।
বস্তুত এর কোনো বিকল্পও নেই। জীবন বাঁচাতে গিয়ে মানুষের জীবিকার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এভাবে অনির্দিষ্টকাল থাকা সম্ভব নয়। বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকাদানের পর সব কিছু খুলে দিতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে টিকার মজুত স্বল্পতার খবর মোটেই কাম্য নয়।
সংকট কাটাতে টিকা সংগ্রহে জোর তৎপরতা চালাতে হবে। সেই সঙ্গে দেশে করোনার টিকা উৎপাদনে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা উচিত বলেও মনে করি আমরা।
