লাগামহীন ওষুধের দাম
উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানো হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেড় বছর ধরে দেশ করোনা মহামারির কবলে। বর্তমানে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডেঙ্গির প্রকোপ। এছাড়া অন্যান্য রোগ তো আছেই। দেশের হাসপাতালগুলো রোগীতে পূর্ণ। স্বভাবতই বেড়েছে ওষুধের চাহিদা। এর সুযোগ নিচ্ছেন অনেক ওষুধ বিক্রেতা। প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, দেড় বছরে কোনো ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি। ওষুধ কোম্পানিগুলোও বলছে একই কথা। তাহলে বিক্রেতারা কেন ওষুধের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছেন? এটা ঠিক, অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম হলো, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তবে মনে রাখতে হবে, ওষুধ কোনো বিলাসী ভোগ্যপণ্য নয়। এর ওপর মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করা অনেক বেশি জরুরি।
করোনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। এরপরও সেসব ওষুধ অনেক বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু দেশে উৎপাদিত ওষুধ নয়, অভিযোগ আছে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত করোনার অতি জরুরি ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে কয়েকগুণ দামে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, মানুষের জীবন যখন বিপন্ন, তখনো ওষুধ নিয়ে কিছু লোকের বাণিজ্যিক মনোবৃত্তি বন্ধ হয়নি। তারা হিসাব করছে লাভের অঙ্ক! এ মানসিকতা অমানবিক।
করোনার কারণে সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে আছেন। তাদের অনেকেরই জীবন-জীবিকা বিপন্নপ্রায়। যারা করোনা বা ডেঙ্গিজ্বর অথবা অন্য কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অবস্থা আরও সঙ্গিন। এ অবস্থায় সমাজের সবারই দায়িত্ব রয়েছে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো। অন্তত পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়া কারও উচিত নয়। এ ব্যাপারে সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। উপায়ান্তর না দেখে অনেকে ঝুঁকবে ঝাড়ফুঁক আর টোটকা চিকিৎসার দিকে। এতে দেশের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা নিরসনে উদ্যোগী হওয়া।
ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতিমুনাফা প্রবণতার কথা আমরা জানি। তারা দফায় দফায় ওষুধের দাম বাড়াতে অভ্যস্ত। করোনাকালে ওষুধের দাম না বাড়ানোর জন্য তাদের সাধুবাদ জানাতে হয়। আমরা আশা করব, তাদের এ সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকবে। পাশাপাশি এ সময় যেসব ওষুধের চাহিদা বেশি, সেগুলোর উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে বাজারে ওষুধের সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে তারা।
দেশে ওষুধ শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। চাহিদার সিংহভাগ মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে দেশে উৎপাদিত ওষুধ। এ খাতের প্রসার ঘটলে সার্বিকভাবে লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি। সেজন্য ওষুধ শিল্পের বিকাশে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে, এটাই আমরা চাই। তবে ওষুধের মান ও অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণের যথাযথ ব্যবস্থা রেখেই যা কিছু করার তা করতে হবে। এ লক্ষ্যে ওষুধের বাজার নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
