Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

কষ্টে আছে স্বল্প আয়ের মানুষ

Icon

আর কে চৌধুরী

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কষ্টে আছে স্বল্প আয়ের মানুষ

দেশে করোনাকাল চলছে প্রায় দেড় বছর ধরে। এ সময়ে একদিকে মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে ব্যয়। প্রধানত নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে।

টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ আর পাইজামের ২২ শতাংশের বেশি। এছাড়া আটার ১০ দশমিক ৭১ ও ময়দার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। বেড়েছে ডাল, গুঁড়াদুধ, ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দামও।

করোনা মহামারির মধ্যে মানুষের আয়-উপার্জন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। বেসরকারি খাতের কর্মজীবীদের অনেকে কাজ হারিয়েছেন, অনেকে কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবহণ খাতের শ্রমিকসহ অনেক খাতের শ্রমিকদের কাজ নেই, উপার্জন নেই। বিভিন্ন জরিপে উঠে আসছে মানুষের সীমাহীন দুর্দশার কথা। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপ অনুসারে, এই মহামারির মধ্যে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে। কমে গেছে তাদের ক্রয়ক্ষমতা। এমন পরিস্থিতিতেও একশ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে নানা ছলছুতায় মানুষের পকেট কাটছে এবং অন্যায় মুনাফা লুটছে। বর্তমানে তেমনই একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে চালের বাজারে।

দেড় মাসের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। বাজারে সবচেয়ে কম দামের যে মোটা চাল, যা মূলত গরিব মানুষের খাদ্য, তারও কেজিপ্রতি দাম হয়েছে ৫০ টাকা। আর একটু ভালো মানের এক কেজি চাল কিনতে লাগছে ৭০ টাকারও বেশি। এ অবস্থায় গরিব মানুষকে রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত বোরো মৌসুমে দেশে চালের উৎপাদন ছিল সন্তোষজনক। পাশাপাশি চাল আমদানিও হয়েছে। সরকারি গুদামগুলোতে চালের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম ক্রমেই কমছে। এমন অবস্থায় দেশে চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?

কারণ একটাই-কিছু চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীর অনৈতিক মুনাফার বাসনা। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হিসাবে দেখা যায়-ধানের ক্রয়মূল্য, চাল উৎপাদন ও পরিবহণসহ সংশ্লিষ্ট সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি কেজি চালে ব্যবসায়ীদের মুনাফা হয় ১৩-১৪ টাকা। তাতেও তারা সন্তুষ্ট নন। সুযোগ পেলেই তারা সিন্ডিকেট করে চালের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে যান। শুধু চালের দাম বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত মুনাফা নয়, ধান কেনার সময়ও কৃষকদের বঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে।

মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার সরকারি কার্যক্রম থাকলেও তা অপর্যাপ্ত এবং ধানের নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিত করতে সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। তখনও মিলার ও বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে ধান কেনে। ব্যবসার নামে এমন স্বেচ্ছাচারিতা কোনোমতেই কাম্য নয়। দেশে ধান-চালসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপও খুব দুর্বল। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) কার্যক্রম থাকলেও এটি অত্যন্ত সীমিত। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি সারা বছর চলা এবং এর পরিধি অনেক বাড়ানো প্রয়োজন। টিসিবি ট্রাক সেলের মাধ্যমে চাল ছাড়া কিছু পণ্য দিলেও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই তা নিতে পারে না। আবার কেউ কেউ বারবার পণ্য নিয়ে বাজারে বিক্রি করে। চাল-ডাল-তেলের মতো জরুরি খাদ্যপণ্যের রেশনিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা

 

স্বল্প আয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম